Categories
রকমারিনগর |

অব্দ জব্দ

639 |
Share
| ১৪ এপ্রিল, ২০২১
বঙ্কুবাবু

প্রাক্তন রেডিও উপস্থাপক ও ভোজনরসিক

চিত্র: বাংলা ক্যালেন্ডারের অংশ

বলো তো খোকা-খুকু, ঘটাই-ঘুটুম, মিন্টু-ঝন্টু, বুকুন-মামণি শকাব্দ আর বঙ্গাব্দর তফাৎ কী? আর খ্রিষ্টাব্দ? হিজরি ব্যাপারটাই বা কী? গুলিয়ে যাচ্ছে তো সব? গুলিয়ে যাবারই কথা। আরে বাবা আমাদেরই এসব মনে থাকে না, সেখানে তোমাদের তো এসব শক্ত লাগবেই। তা এক কাজ করা যাক। যা শক্ত, তাকে একটু সহজ করে বুঝে নেওয়া যাক।

একটা জিনিস প্রথমেই তোমরা লক্ষ্য করো— শকাব্দ, বঙ্গাব্দ ইত্যাদি এই এত রকমের ক‍্যালেন্ডার মূলত তৈরি হয়েছে কোনও রাজা বা কোনও ধর্মগুরুকে কেন্দ্র করে। যেমন—

জুলিয়াস সিজারের প্রস্তাবে যে ক‍্যালেন্ডার শুরু হয়, তাকে বলে জুলিয়ান ক‍্যালেন্ডার।

উত্তর ভারতে বিক্রমাদিত্যর নামে বিক্রমী ক‍্যালেন্ডার প্রচলিত ছিল।

খ্রিষ্টকে কেন্দ্র করে যে ক্যালেন্ডার তৈরি হল, তাকে বলা হয় খ্রিষ্টাব্দ। এই ক্যালেন্ডারের দুটি ভাগ রয়েছে। একটি হল খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। অন্যটি খ্রিষ্টাব্দ। আগে বলা হত AD, anno Domini অর্থাৎ in the year of our lord। বাংলায় একেই বলা হত খ্রিষ্টাব্দ। তবে এখন খ্রিষ্টাব্দ ব্যাপারটা ক্রমশ উঠে যাচ্ছে। এখন বলা হয় 2021 CE অর্থাৎ Common Era। ঠিক একই ভাবে আগের BC (Before Christ/খ্রিষ্টপূর্ব) সরে গিয়ে এখন হয়েছে BCE (Before Common Era)।

এছাড়া পোপ গ্ৰেগরি যে ক‍্যালেন্ডার প্রর্বতন করেন, সেটিকে বলা হয় গ্ৰেগরিয়ান ক‍্যালেন্ডার।

পৃথিবীতে সবচেয়ে প্রচলিত ক‍্যালেন্ডার, যেটা আমরা ব‍্যবহার করি, তা হল― এই গ্ৰেগরিয়ান ক‍্যালেন্ডার। এই ক‍্যালেন্ডার অনুসারে এটা ২০২১-এর এপ্রিল মাস।

এবার আসি বাংলায়। বাংলায় যে তিনটি ক‍্যালেন্ডার অতি মাত্রায় ব‍্যবহৃত হয়েছে, তা হল শকাব্দ, হিজরি ও বঙ্গাব্দ।

শকাব্দ: শকাব্দের গণনা শুরু হয় কিংবদন্তী শকরাজা শালিবাহন রাজার রাজত্বকালে। এটি ৭৮ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয়।

হিজরি: হিজরি হল মুসলমান ধর্মের ক‍্যালেন্ডার। এর গণনা শুরু হয় ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে। ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে নবী মহম্মদ ও তাঁর সঙ্গীরা মক্কা থেকে মেদিনায় যান এবং প্রথম মুসলমান সংগঠন স্থাপন করেন। এইটিকে বলা হয় হিজরা। পরে যখন ইসলামীয় ক‍্যালেন্ডার নির্মিত হয়, তখন সেটির নামক‍রণ করা হয় হিজরি। হিজরি আর খ্রিষ্টাব্দের মধ‍্যে ফারাক ৫৭৮ বছর।

বঙ্গাব্দ: কোনও কোনও ইতিহাসবিদ বলেন বাংলার রাজা শশাঙ্কের সময় থেকে এই বঙ্গাব্দের শুরু। কেউ বলেন বাংলার সুলতান হুসেন শাহ হিজরি ক‍্যালেন্ডারের সঙ্গে মিলিয়ে বঙ্গাব্দ তৈরি করেন। অনেকে বলেন, সম্রাট আকবর, কর আদায়ের জন‍্য জ‍্যোতির্বিদ ফাতুল্লা সিরাজীকে বলেন হিন্দু এবং মুসলমান ক‍্যালেন্ডারকে একত্রিত করে একটি নতুন অব্দ চালু করা হোক। এটির নাম হোক বঙ্গাব্দ। তাই দেখা যায় যে বঙ্গাব্দ বাঙালির জীবনে প্রবেশ করে আকবরের সময় থেকে। বঙ্গাব্দ আর খ্রিষ্টাব্দের মধ‍্যে ফারাক ৫৭৮ বছর।

তাহলে, এবার চলো আমরা ছোট্ট একটা মজা করি। এটা কত সাল? গ্ৰেগরিয়ান ক‍্যালেন্ডার অনুসারে ২০২১।

এটা তাহলে কত শকাব্দ? ২০২১- ৭৮ = ১৯৪৩ শকাব্দ
কত হিজরি? ২০২১- ৫৭৮= ১৪৪৩ হিজরি
কত বঙ্গাব্দ? ২০২১- ৫৯৩ = ১৪২৮ বঙ্গাব্দ

তাহলে বঙ্গাব্দ আর শকাব্দর মধ‍্যে কত তফাৎ হল?

৫১৫ বছর।

আর হিজরি ও বঙ্গাব্দের ভেতর তফাৎ?

১৫ বছর।

সুতরাং, এখন কোথাও শকাব্দ বা বঙ্গাব্দ দেখলে ঝট করে এই অঙ্কটা কষে বের করে ফেলতে পারবে, সেটা কত খ্রিষ্টাব্দ বা Common Era ছিল! আর কোনও অসুবিধা হবে না। অব্দ এবার এবার কেমন জব্দ! টিং-টং!

তথ্য: Wikipedia