বিলুকে যে সেদিন জ্যাম্মা বাবার হাতের আড়ং ধোলাই থেকে বাঁচিয়েছিল, সেটা তো সবার মনে আছে। কিন্তু, বিলুর মনে শান্তি নেই। ও খালি ভাবে, এঁচোড়ে পাকা কথাটা কী এমন যার জন্য এত কিছু ঘটল।
বিলু আস্তে আস্তে বুঁচকিদির ঘরে গেল। দিদি তখন কানে হেডফোন লাগিয়ে ল্যাপটপে কী সব কাজ করছে। বিলুকে দেখে একটা ভেঙচি কেটে আবার নিজের কাজ করতে লাগল। বিলু বেরিয়ে এসে রান্নাঘরে উঁকি মেরে দেখল, মা আর জ্যাম্মা রান্না করছে। ওর দিকে তাকালোই না। জেজু কি ওকে বলে দেবে কথাটার মানে? জ্যাম্মা তো জেজুকেই বলতে বলেছিল। জেজুর ঘরের দিকে এগোতে গিয়ে ও শুনল, জেজু কার সাথে ইংরিজিতে কথা বলছে। তার মানে, জেজু এখন রেগে গেছে। বাবা বলে, দাদা, তুই রেগে গেলেই তোর মুখে ল্যাতিনঘেঁষা ইংরিজির বান ছোটে। যাকে বলিস, তার তো ভিরমি খাওয়ার জোগাড় হয়। এবার শুধু একটাই জায়গা। বাবা। যদি ওকে মারতে আসে তো এমন চিৎকার করে করে কাঁদবে যে জ্যাম্মা ছুটে আসবে। ব্যাস, বাবা আর কিচ্ছু করতে পারবে না তখন।
বিলু ঘরে ঢুকে দেখে, বাবা টেবিলের ওপর একটা বাজে কাগজ রেখে নখ কাটছে। ও চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল একটুক্ষণ। বাবার নখ কাটা শেষ হতেই ও পিছন থেকে বাবার গলা জড়িয়ে ঝুলে পড়ল। বলল, বাবা, এঁচোড়ে পাকা কি খুব খারাপ কথা? এর মানে কি?
বাবা ওকে জড়িয়ে ধরে হো হো করে হেসে ফেলল। বলল, এগুলো বাগধারা, বিলু। তুই একটু উঁচু ক্লাসে উঠলেই বুঝবি। আচ্ছা, ঠিক আছে, খেয়ে দেয়ে আমি তোকে এর মানে বোঝাব। চল, তোকে স্নান করিয়ে দি।
বিলুর বাবা বিলুকে বাগধারা বোঝানোর আগেই আমরা নতুন কয়েকটা বাগধারার দিকে চোখ বুলিয়ে নি। এসব তো বিলু, ওর নানা জায়গায় ছড়িয়ে থাকা বন্ধু আর দাদাদিদিদের জন্যই।
১১
‘Baker’s dozen’ মনে আছে তো? ঐ যে গো, যার মানে বারোটার জায়গায় তেরোটা দেওয়া।
কথাটার শুরু হয়েছিল ইংল্যান্ডে। ১২৬৬ সালে রাজা তৃতীয় হেনরির রাজত্বকালে সেখানে আইন করে পাউরুটির ওজন নির্দিষ্ট করে দেওয়া হল। বলা হল, কোন রুটিওলা ওই ওজনের থেকে কম ওজনের পাউরুটি বেচলে তার জরিমানা হবে। রুটিওলারা তখন জরিমানার ভয়ে একটু বেশি করেই দিতে লাগলেন। কেউ বারোটা পাউরুটি কিনলে তাকে ঝামেলা এড়ানোর জন্য তেরোটা দিতে শুরু করলেন।
অনেক পন্ডিত অবশ্য এর উৎপত্তির সময় ১২৬৬ সাল কি না, তা নিয়ে সন্দেহপোষণ করেন।
ছাপার অক্ষরে এটি আত্মপ্রকাশ করে ১৫৯৯ সালে।
উদাহরণ— ‘Ramala purchased rose flower worth Rupees Ten and told the vendor to make it a baker’s dozen.’
গোদা বাঙলায় একে বলে ‘ফাউ দেওয়া’। যেমন, ‘শর্মি ঊর্মিকে বলল, মোড়ের মাথায় একদম বাঁদিকের ফুচকাওলাটার কাছ থেকে খাবি। ঐ কাকুটা ফাউ দেয়’।
১২
‘Be on one’s high horse’ মানে খুব দাম্ভিক ও উদ্ধত আচরণ করা, অন্যদের নিচু নজরে দেখা।
আগেকার দিনে ইংল্যান্ডে কে কত বড় রহিস আদমি, তা ঠিক করা হত তিনি কত উঁচু, কত লম্বা ঘোড়ায় চড়েন, তা দেখে। যিনি যত বড় রহিস আদমি, তাঁর ঘোড়া অন্যদের তুলনায় ততটাই উঁচু আর লম্বা হত। স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষমতার দম্ভে তার আচরণ হত ততই উদ্ধত।
কথাটার শুরু ইংল্যান্ডে মধ্যযুগে, ১৩৭৫ থেকে ১৪২৫ সালের মধ্যে। তবে, Idiom হিসাবে এর পথচলা শুরু ১৭৮০র দশকে।
উদাহরণ— ‘Our new Councillor is on his high horse and refuses to answer our questions.’
বাংলায় বলে, ‘ধরাকে সরাজ্ঞান করা’ বা ‘আমি কী হনু রে’।
যেমন, ‘খেলায় জিতে ও এখন ধরাকে সরাজ্ঞান করছে, কাউকে পাত্তাই দিতে চায় না’। বা, ‘খেলায় জেতার পর ওর অবস্থা দেখেছিস? সবসময় আমি কী হনু রে ভাব। কথার জবাবই দিতে চায় না।’
১৩
‘Between Scylla and Charybdis’ Idiomটি ব্যবহার করা হয় দুদিকেই মারাত্মক বিপদ বা উভয় সঙ্কট বুঝাতে।
Scylla (সাইলা) আর Charybdis (ক্যারিবডিস) হল মেসিনা প্রণালীর সঙ্কীর্ণ সমুদ্রপথের মাঝে দুটো পাহাড়। Scylla-র অবস্থান ইতালির দিকে আর Charybdis-এর অবস্থান সিসিলিয়ার দিকে।
প্রাচীন গ্রীক উপকথায় Scylla (সাইলা) ছিল বারো ফুট লম্বা এক মহিলা দৈত্য। ছ’টা মাথা ছিল তার আর দাঁতগুলো ছিল ধারালো ক্ষুরের মতো। কপালের ফেরে যদি কোন নাবিক তার কাছে গিয়ে পড়ত, ঐ দাঁত দিয়ে সে তাকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করত।
আর, Charybdis (ক্যারিবডিস) ছিল দৈত্যের মতো দেখতে এক ঘূর্ণিপাক। একসাথে সে অনেকটা জল শুষে নিত আর সেই জলের মধ্যে যে নাবিকেরা পড়ে যেত, তাদেরও গিলে খেত।
তার মানে, ঐ অঞ্চলে নাবিকদের দুদিকেই বিপদ ছিল। উভয়সঙ্কট যাকে বলে।
আটশ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে Homer-এর লেখা ‘Odyssey’-তে এর প্রথম উল্লেখ দেখা যায়।
১৫১৫ সালে ডাচ পন্ডিত Erasmas তার ল্যাতিন গ্রন্থ ‘Adagia’তে এর উল্লেখ করেন, ‘Evitala Charybdi in Scyllan incidi’ রূপে, যার আক্ষরিক ইংরাজী অনুবাদ, ‘Having escaped Charybdis I fell into Scylla’।
Idiom হিসাবে এর প্রথম প্রয়োগ দেখা যায় ১৫৫২ সালে ফরাসী কবি Barthe’lemy Aneauর লেখা ‘Picta Poesis’-এ।
ইংরাজিতে ‘Between the devil and the deep blue sea’ আর ‘Between a rock and a hard place’ Idiom দুটিও ঐ একই অর্থে ব্যবহার করা হয়।
‘Between Scylla and Charybdis’ Idiom-টির প্রয়োগ দেখা যায় William Shakespeare-এর ‘Merchant of Venice’ নাটকে। তাছাড়া, Virgil থেকে George Bernard Shaw-ও তাঁদের লেখায় এর প্রয়োগ করেছেন।
উদাহরণ— ‘Swapan wanted to please both the management and the opponent workers’ union. His condition was like in between Scylla and Charbydis/between the devil and the deep blue sea/between a rock and a hard place.’
বাংলায় বলে, ‘জলে কুমীর ডাঙ্গায় বাঘ’। এটা শুনলেই গভীর জল-জঙ্গলে ঘেরা সুন্দরবনের কথা মনে হয় না?
উদাহরণ— ‘নীলচাষ করতে রাজি না হলে নীলকর সাহেব দেবে হাতের আঙুল কেটে আর নীলচাষ করলে জমির গুণ যাবে নষ্ট হয়ে। বাঙলার রায়তের সে ছিল জলে কুমীর ডাঙ্গায় বাঘ অবস্থা।’