আমাদের জীবন তো এখন ইন্টারনেট-সর্বস্ব। সারাদিন কেটে যায় মোবাইলে চোখ রেখে। স্কুল কলেজের অনলাইন ক্লাসও ইন্টারনেট ছাড়া চলবে না। কিন্তু ইন্টারনেট জিনিসটা ঠিক কী বলো তো? কোথা থেকে এল এই ইন্টারনেট?
ইন্টারনেটের অন্যতম আবিষ্কারকর্তা ভিনসেন্ট সার্ফ (Vincent Cerf) বলছেন, ‘ইন্টারনেটের জন্ম বহুবছর আগে ১৯৭০-এর দশকে হয়। আমি আর আমার সঙ্গী বব কান (Bob Kahn) দুজনে মিলে শুরু করেছিলাম একটি ডিজাইনের কাজ, যা আজ ইন্টারনেট নামে পরিচিত।
আমরা তখন আর্পানেট (Arpanet) নামক অন্য একটি ডিজাইন নিয়ে গবেষণা করছিলুম। সেইটা করতে করতে হঠাৎ ইন্টারনেট (Internet)-এর ভাবনাটা দেখা দেয়।
আর্পানেট ছিল আমেরিকার ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টের একটা প্রোজেক্ট। পল ব্যারন, একজন ভীষণই প্রতিভাবান কম্পিউটার নেটওয়ার্কের পথিকৃৎ তখন চেষ্টা করছিলেন আমেরিকার ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টের জন্য এমন একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করতে যেটা পারমাণবিক বিস্ফোরণেও অক্ষত থাকবে। তিনি একটা জালের আকৃতির নেটওয়ার্কের কথা পরিকল্পনা করেন, যেখানে প্রতিটি কম্পিউটারের সঙ্গে প্রতিটি কম্পিউটারের একটা যোগাযোগ থাকবে। সেইখান থেকেই ইন্টারনেটের সূত্রপাত। আমেরিকার ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টের সমস্ত কম্পিউটারগুলোকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করার মধ্যে দিয়েই বেরিয়ে এল আধুনিক ইন্টারনেটের মূলসূত্র।’
ক্রমে বিরাট একটি পথ অতিক্রম করল প্রযুক্তি। বহু অসাধারণ ধীমান মানুষেরা এটার সঙ্গে যুক্ত হলেন। ওদিকে স্টিভ জোবস, বিল গেটস-এর মতো মানুষেরা কম্পিউটারের উন্নতি সাধনে লেগে থাকলেন।
১৯৮৫ সাল থেকে গ্লোবাল ইন্টারনেট আমেরিকা থেকে ক্রমশ ইউরোপে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। কিন্তু তখনও সেটা জনসাধারণের হাতে গিয়ে পৌঁছয়নি। সরকারি কাজ বা বড় বড় বেসরকারি কোম্পানিতে ব্যবহার করা হত ইন্টারনেট।
এর মধ্যেই ঘটে যায় একটি ঘটনা ১৯৯০ সাল নাগাদ তরুণ ইংরেজ পদার্থবিদ ও কম্পিউটার গবেষক টিম বার্নারস লি (Tim Berners Lee) সার্নে কাজ করছিলেন। এই CERN হল European Organization for Nuclear Research। টিম বের করে ফেললেন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে ডিজিটালি তথ্য সংরক্ষণ করা যায়। তাঁকে সাহায্য করলেন হাইপারটেক্সট বিশেষজ্ঞ রবার্ট ক্যাইলিউ (Robert Cailliau)। টিম প্রস্তাব দিলেন World Wide Web এর। তিনি বললেন এর মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে, সেটা নষ্ট হবে না। আজ আমরা প্রতিটি ওয়েবসাইটের আগে যে www দেখি, এর উৎপত্তি কিন্তু তখনই ঘটেছিল।
একসময়ে ইন্টারনেট চলত তারের কানেকশন দিয়ে। পরে তৈরি হল wireless কানেকশন।
টাওয়ারের মাধ্যমে সিগনাল পাঠানোর প্রযুক্তি এল। সেই wireless কানেকশনের ফলেই ইন্টারনেট ছড়িতে পড়তে পারল সারা পৃথিবীতে।
ঋণ: Wikipedia, Vox, CERN, code.org