Categories
খেলার মাঠ |

ক্ষণজন্মা স্পোর্টসম্যান চুনী

438 |
Share
| ১৮ অক্টোবর, ২০২০
সৌম্যেন সরকার

পেশায় উকিল; চিত্রকর, সংগীত ও ক্রীড়া-উৎসাহী

চিত্র সৌজন্য: Sport & Past Time Magazine, September 1962

আমার মেজকাকা ছিলেন খেলার ভক্ত। নিজে কোনওদিন সেভাবে খেলাধুলো করেননি, কিন্তু ওনার মতো খেলার রেকর্ড রাখতে আমি অন্তত কাউকে দেখিনি। সেই মেজকাকার হাত ধরেই ১৯৫৪ সালে প্রথম মোহনবাগান মাঠে যাই। এবং সেই দিনেই প্রথম মোহনবাগানের জার্সি গায়ে নামেন এই খেলোয়াড় যাঁর নাম চুনী গোস্বামী। ফুটবলের নামজাদা কোচ বলাই চট্টোপাধ্যায়ের প্রিয় ছাত্র। প্রথম দিনেই চুনী গোস্বামীর পায়ের জাদুর প্রেমে পড়ে গেলাম। কী অসাধারণ ড্রিবলিংয়ের ক্ষমতা! এই সময়ের পর থেকেই চুনী গোস্বামীর কীর্তিকলাপের খোঁজ রাখতে লাগলাম এবং হয়ে উঠলাম ওঁর গুণমুগ্ধ একজন ভক্ত।

মনে আছে উনি তখন আশুতোষ কলেজে পড়েন। ইন্টারকলেজ টুর্নামেন্টে উনি করলেন ডবল হ্যাটট্রিক। পরবর্তীকালে আর কেউ করেছেন বলে মনে হয় না। এই অল্প পরিসরে জানাই একবার মোহবাগান মাঠে বিহার ও বাংলার সন্তোষ ট্রফির খেলা দেখতে গিয়েছিলাম। সেই খেলায় বাংলা ৫-০ গোলে বিহারকে পরাস্ত করেছিল। সেদিন বাংলার জার্সি ছিল সাদা। বৃষ্টি ভেজা মাঠ— সবাই একবার না একবার আছাড় খেয়েছে। কিন্তু একটি খেলোয়াড় সকলেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন, তিনি চুনী গোস্বামী। ড্রিবলিংয়ে অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়ে একবারও না পড়ে ওঁর সাদা পোশাক অক্ষত রেখেছিলেন। সেদিনের খেলার শেষ গোলটি ছিল শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ। খেলা শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে প্রতিপক্ষের অন্তত ৭-জন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে, গোলকিপারকে কাটিয়ে ওঁর সেই অনবদ্য গোল। আজও স্মৃতিতে অমলিন হয়ে রয়েছে।

চুনী গোস্বামী ফুটবল ছাড়াও ক্রিকেটে সমান পারদর্শী ছিলেন, এ কথা সর্বজনবিদিত। একবার মোহনবাগান মাঠে একটি স্পোর্টসে গিয়েছিলাম। সামনে একটি উইকেট পোঁতা। মাঠে উপস্থিত রীতেন বসু, সরখেল, আরও বেশ কয়েকজন বোলার। কেউই বল করে উইকেটটা ফেলতে পারলেন না। এই সময় উদয় হলেন চুনী গোস্বামী। শার্ট-টাই পরা। অফিস থেকে লাঞ্চ টাইমে বেরিয়ে দেখতে এসেছিলেন। উনি হঠাৎ বললেন, ‘দেখি বলটা’। হাতটা একটু গুটিয়ে বল করলেন। দু’বারই উইকেটটা ফেলে দিলেন। কী অসাধারণ দক্ষতা!

আরও একটি ঘটনা ব’লে আজকের প্রতিবেদন শেষ করব। তখন চুনী-পিকে-বলরাম অবসর গ্রহণ করেছেন। একটি প্রদর্শনী ম্যাচ হচ্ছে ভেটারেনস বনাম স্টেট ট্রান্সপোর্ট টিমের। সেই সময় স্টেট ট্রান্সপোর্টে খেলছেন পরিমল দে, অসীম মৌলিক প্রমুখ। হঠাৎ দেখলাম বলরামের পাস থেকে চুনী বলটি ধরলেন, ধরে মাঠের ডানদিকে চলে গেলেন, সঙ্গে সঙ্গে পিকে মাঠটা আড়াআড়িভাবে দৌড়ে বামপ্রান্তে চলে গেলেন এবং চুনীকে হাত নেড়ে ইশারা করলেন। চুনী তখন একজনের পর একজনকে কাটিয়ে একটা লম্বা পাসে পিকের পায়ে বলটা ফেললেন এবং পিকে অসাধারণ একটি শটে গোল করলেন।

নয়নাভিরাম দৃশ্য! আজও স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে। চুনী গোস্বামী সম্পর্কে লিখতে বসে অনেক পুরনো কথাই স্মৃতিতে ভেসে উঠছে, কিন্তু এই স্বল্প পরিসরে সেই সবকিছু লেখা সম্ভব হল না। এইটুকু জানিয়ে রাখি যে চুনী গোস্বামীর মতো আবার কেউ আসবেন কিনা সন্দেহ। তিনি ছিলেন একজন ক্ষণজন্মা স্পোর্টসম্যান।