Categories
পুজোর খাতা ২০২৪ |

গল্প লেখার গল্প

126 |
Share
| ৫ অক্টোবর, ২০২৪
শর্মিষ্ঠা বসু

চিত্রবিন্যাস/ কমলাকান্ত পাকড়াশী

এরকম একটা ঘটনা যে ঘটবে সেটা রাখহরি সান্যাল ভাবতেই পারেননি। এক্সপ্রেসওয়ে ধরে দিব্যি ঘুমোতে ঘুমোতে আগ্রা থেকে দিল্লি যাচ্ছিলেন। দিল্লীর কাছাকাছি এসে সব গন্ডগোল হয়ে গেল। ফাঁকা হাইওয়েতে ড্রাইভার নন্দলাল গাড়িটা একটু বেশি জোরে ছোটাতে শুরু করেছিল। তারপর গাড়ি ঝড়ের গতিতে ছুটতে লাগল, স্পিডোমিটারের কাঁটা ক্রমশ উপরের দিকে উঠল, আর ঠিক তখনই ঘটে গেল ঘটনাটা।

আধো ঘুমের মধ্যেই রাখহরিবাবু একটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি টের পেলেন। তারপর কান-ফাটানো একটা শব্দ ছড়িয়ে গেল চারিদিকে, থরথর করে কেঁপে উঠল গাড়ি আর রাখহরি সান্যাল কিছু বোঝার আগেই বিকট আওয়াজ করে গাড়িটা থেমে গেল।

এর পরে অবশ্য তাঁর আর কিছুই মনে নেই। চোখ খুলতেই চারিদিকে শুধু জমাট বাঁধা অন্ধকার ছাড়া তিনি আর কিছুই দেখতে পেলেন না।

অনেক কষ্টে শরীরটাকে টেনে হিঁচড়ে গাড়ির ভেতর থেকে বের করে নিয়ে আসতেই রাখহরিবাবুর মনে হল তাঁর গাড়িটা যেখানে পড়ে আছে তার ত্রিসীমানায় কোন লোকালয় নেই। নিঝুম, নিস্তব্ধ রাত।

চারিদিকে শুধু ধুধু মাঠ, আর ঝোপজঙ্গল। অত রাত্রে কোথাও যাওয়া হবে না ভেবে অন্ধকারের মধ্যেই রাখহরিবাবু কিছুক্ষণ হাঁকডাক করে লোকজন জড়ো করার চেষ্টা করলেন কিন্তু কোথাও কারো দেখা পাওয়া গেল না।

এমন বিশ্রী পরিস্হিতিতে খুব স্বাভাবিকভাবেই তিনি দিশেহারা বোধ করছিলেন। একটা বিশেষ কাজে তাঁর দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল। ট্র্যাভেল এজেন্সির সঙ্গে কথাবার্তা বলে হোটেলে থাকা আর লাল কেল্লায় গাইডের ট্যুরের সব ব্যবস্হা আগেই করে নেওয়া হয়েছিল। মাঝখান দিয়ে এই দুর্ঘটনা সব প্ল্যান ভেস্তে দিল।

কথাগুলো মনে পড়তেই রাখহরিবাবুর খুব বিরক্ত লাগছিল।

বাধ্য হয়ে যা কপালে আছে বলে তিনি অন্ধকারেই হাঁটা দেবেন ঠিক করলেন। যদি তাতে ভাগ্যক্রমে কোন লোকজন চোখে পড়ে।

চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। এক হাত দূরের কিছু দেখা যাচ্ছে না। একটু দোনামোনা করছিলেন রাখহরি সান্যাল। কী করবেন ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখতে পেলেন একটা আলো ধীরে ধীরে তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে।

তারপর সেই আবছা আলো একটু একটু করে স্পষ্ট হয়ে উঠল।
আর কোথা থেকে যেন মশাল হাতে একটা আলখাল্লা পরা লোক রাখহরিবাবুর চোখের সামনে আচমকা ভেসে উঠল।

‘আইয়ে জনাব, আজ রাতে আপনি আমাদের কেল্লায় বিশ্রাম করুন’, ঘাড় হেঁট করে সেলাম করল লোকটা।

রাখহরি সান্যাল দুর্বল মানুষ নয় তবু অন্ধকার ফুঁড়ে হঠাৎ বেরিয়ে আসা লোকটা তাঁকে প্রচণ্ডভাবে চমকে দিয়েছিল। তবে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করার সুযোগই পেলেন না।

ভেতরে ভেতরে অস্বস্তি বোধ করলেও রাখহরিবাবু বেশ বুঝতে পারছিলেন যে মশালের আলোটা যেন হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে চলেছে আর সেই আলোর টানে তিনি নিজেও ভেসে চলেছেন। এক অদৃশ্য শক্তি যেন ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে তাঁকে। অনেক চেষ্টা করেও পা মাটিতে ঠেকছে না।

এভাবে কতক্ষণ ভেসেছিলেন তা বলতে পারবেন না তবে ভাসতে ভাসতে হঠাৎই তাঁর চোখ পড়ল প্রকাণ্ড একটা কেল্লার দিক।

আর রাখহরিবাবুকে আরও হতবাক করে দিয়ে লোহার পাতে মোড়া কেল্লার দরজাটা হাট হয়ে খুলে গেল।
সম্বিত ফিরতেই তিনি দেখলেন একটা বিশাল ঘরে একাই দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর মাথার ওপর বিশাল ঝাড়লন্ঠন থেকে আলো ঠিকরে পড়ছে, আর সেই আলো ঝলমল করা ঘরের চারিদিকে ঐশ্বর্যের ছড়াছড়ি। মখমলের গদি, মেঝেতে সোনা-রূপোর কাজ করা গালিচা, আরাম কেদারার সোনার পায়াতে হাতির দাঁতের কারুকাজ। চোখ যেন ধাঁধিয়ে যায়।

‘আইয়ে বৈঠিয়ে জনাব, এক কালে আমি বঙ্গাল মুলুকে ছিলাম তাই বাংলা ভাষা একটু আধটু বলতে পারি। আপনি ইতিহাসের কহানি লেখার জন্য দিল্লি এসেছেন এ বড় ভালো কথা। তবে আগে বসুন জনাব, এখানে বিশ্রাম করুন। আমি আপনার খানার ইন্তেজাম করে আসি। আমাদের বাদশাহ মেহমানের আদরযত্নের কোন ত্রুটি সহ্য করতে পারেন না’, লোকটা ভাঙা ভাঙা বাংলায় কথা বলল।

হতভম্ব রাখহরিবাবু লোকটার দিকে তাকালেন। তাঁর মুখ থেকে বিস্ময়ের রেখাগুলো মিলিয়ে যাওয়ার আগেই লোকটা হঠাৎই যেন বাতাসে মিশে গেল। ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত লাগছিল ।

অবাক হয়ে তিনি ভাবতে লাগলেন লোকটা তাঁর সমন্ধে এত খুঁটিনাটি জানল কী করে? রাখহরি সান্যাল পেশায় একজন লেখক। ইদানীং মুঘল সম্রাট আকবরের জীবনকে ভিত্তি করে তিনি একটি গল্প লেখা শুরু করেছেন।

এবার তাঁর দিল্লি যাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল সেই বিষয়ে কিছু তথ্য সংগ্রহ করা। কিন্তু একটা অচেনা লোক তাঁর বিষয় এত কিছু জানে এই ব্যাপারটার তিনি কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পেলেন না।

খুবই অস্বস্তি বোধ করছিলেন রাখহরিবাবু। মূল বিষয়টা বারবার বোঝার চেষ্টা করছিলেন।
কিন্তু তাঁর মনে যে সব প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছিল সেগুলোর কোন সন্তোষজনক উত্তরের সন্ধান অনেক চেষ্টা করেও মিলল না।
বাধ্য হয়ে তিনি তখন ভাবনাটা ঘোরাবার চেষ্টায় এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে লাগলেন। আর একটু ভালো করে তাকাতেই কেমন যেন রহস্যময় মনে হল ব্যাপারটা ।
চারদিকে প্রচুর লোকজন জমকালো পোশাক পরে নিঃশব্দে চলাফেরা করছে। তাঁদের দেখলে মনে হয় বেশ সম্ভ্রান্ত ঘরের মানুষ। কিন্তু কেমন যেন থমথম করছে মুখগুলো, এমনকি তাদের হাঁটাচলার শব্দ পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না।

একটা প্রশ্ন খুব স্বাভাবিকভাবেই রাখহরিবাবুর মনে হচ্ছিল—‘এরা কারা?’ আর যত এই প্রশ্নটা মনের মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল তাঁর অস্বস্তি তত বেড়ে চলেছিল।

চেষ্টা করেও তিনি মনের সেই অস্বস্তিটাকে চিন্তা থেকে কিছুতেই ঠেলে সরিয়ে দিতে পারলেন না। সবসময়ই মনে হচ্ছিল কোথাও কোন একটা গন্ডগোল আছে।

“আইয়ে জনাব, খানা তৈয়ার হ্যাঁয়,’ একটা ফ্যাসফ্যাসে গলার আওয়াজ শুনতে পেয়ে অন্যমনস্ক রাখহরিবাবু মুখ ফিরিয়ে তাকালেন। আর তাকাতেই দেখতে পেলেন সেই লোকটা আবার তাঁর সামনে হাজির হয়েছে।

ততক্ষণে খাবার পরিবেশনের আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। জরির ফুলকাটা মখমলের ওড়না দিয়ে ঢাকা সোনার থালা বাটিতে এলাহি খাবারদাবারের আয়োজন দেখে রাখহরিবাবুর তখন চোখ কপালে ওঠার অবস্থা। ‘আইয়ে জনাব, এই মলগুবা, দমপুক্ত, মুতাঞ্জন— সব আমাদের শাহি রসুইঘরে তৈরি হয়েছে। আমাদের খানদানের নিয়ম অনুযায়ী আগে মীর বকওয়াল রসুইঘরের সব খানা পরখ করেন তারপর খানা পরিবেশন করা হয়, লোকটার মুখে বিগলিত হাসি।’

খানদানি আদরযত্নের কোন ত্রুটি না হলেও কোনরকমে খাওয়া শেষ করলেন রাখহরিবাবু। এত সুস্বাদু খাবার কেন জানি না তৃপ্তি করে খেতে পারলেন না। এত জাঁকজমক, এত জৌলুসের মধ্যে থাকতে তাঁর যে ভালো লাগছিল তা নয়। মন থেকে খটকাটা কিছুতেই যাচ্ছিল না। সবসময়ই মনে হচ্ছিল এখানে না এলেই বোধহয় ভালো হত।

‘এবার আপনি আমাদের কেল্লার ভেতরে একটু ঘুরে বেড়ান জনাব। আপনার লেখার রসদ আপনি এখানেই খুঁজে পাবেন’, লোকটা রাখহরিবাবুর দিকে তাকিয়ে একটা অদ্ভুত হাসি হাসল। তারপর বলল, ‘আমাদের শীসমহল, দিওয়ান-ই-আম, দিওয়ান-ই-খাস সব আপনি ঘুরে দেখুন। একটু এগিয়ে গেলেই বাদশাহর খুশবুখানা। নানা ধরণের মেহেকদার আতর তৈরি হয় এই খুশবুখানায়, আরও খানিকটা এগিয়ে গেলেই শীসমহল, রংমহল। এই কেল্লার পাশেই মীনা বাজার বসে। সওদাগরেরা, লাহোর থেকে মখমল, কাশ্মীর থেকে শাল, পারস্যের কিংখাব নিয়ে আসে,’ লোকটার হাবভাব বেশ অমায়িক হলেও মুখের সেই অদ্ভুত হাসিটা তখনও ঠোঁটের কোণায় লেগে আছে।

খাওয়াদাওয়া শেষ করে এবার রাখহরিবাবু লোকটার দিকে একটু কৌতূহলের দৃষ্টিতে তাকালেন। ততক্ষণে তাঁর হতভম্ব ভাব অনেকটা কেটে গেছে। ভেতরে ভেতরে তিনি বেশ অস্হির হয়ে উঠেছেন। আর পুরো ঘটনাটাকে বিশ্লেষণ করতেই তার মনে হয়েছে একটু বেশিরকম বাজে বকছে লোকটা।

রাখহরিবাবু বিরক্ত বোধ করছিলেন । নিজের মনেই গজগজ করছিলেন তিনি। যত্তসব গাঁজাখুরি গল্প। দিব্যি সুস্থ স্বাভাবিক একটা লোক। চেহারা দেখে, কথাবার্তা শুনে পাগলামির বিন্দুমাত্র লক্ষণ আছে বলে মনে হয় না। অথচ তখন থেকে শুধু আবোলতাবোল গল্প শুনিয়ে চলেছে।
আর থাকতে না পেরে রাগের চোটে তিনি হঠাৎ উঠে দাঁড়ালেন। তারপর কোনোরকম ভণিতা না করেই বললেন, ‘আপনি বারবার ঠিক কোন বাদশাহর কথা বলছেন জানতে পারি কি?’
‘আপনি এখন আকবর বাদশাহ র রাজত্বে আছেন জনাব,’ লোকটা মাথা নীচু করে ঘাড়টা একবার চুলকে নিল।

এবার রাখহরিবাবু নিশ্চিত হলেন যে লোকটা বদ্ধ পাগল।
তিনি লোকটার মুখের দিকে সোজা তাকিয়ে গম্ভীর মুখে বললেন, ‘আপনার বোধহয় একটি তথ্য জানা নেই। জালালউদ্দিন মহম্মদ আকবর অর্থাৎ বাদশাহ আকবরের মৃত্যু হয়েছিল ষোলশো পাঁচ খ্রিষ্টাব্দে। তাঁর রাজত্বের সময়কাল আমরা বহুদিন আগেই পেছনে ফেলে এসেছি। এখন আমরা সবাই একবিংশ শতাব্দীর মানুষ—’

‘কিন্তু আপনি তো এখন আর মানুষ নেই জনাব,’ লোকটা মুচকি হাসল, কেমন যেন অস্বাভাবিক মনে হল ওর হাসিটা।

রাখহরিবাবু হাসবেন না কাঁদবেন বুঝতে পারলেন না। এবার সত্যিই লোকটাকে তার পাগল মনে হচ্ছিল।
‘মানে!’ প্রচণ্ড বিরক্তি আর বিস্ময় থেকেই তাঁর গলা দিয়ে একটা চিৎকার ঠিকরে বেরিয়ে এল।

‘আপনি এখন আর বেঁচে নেই জনাব। আজ সকালেই একটা ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় আপনার গাড়িটা . . . আর তার সঙ্গে আপনিও . . . ,’ লোকটা বেশিক্ষণ তাঁকে দ্বিধায় রাখল না।

রাখহরিবাবুর খুব রাগ হচ্ছিল। অবাক হয়ে তিনি দেখলেন যে লোকটার বক্তব্য চমকে ওঠার মতো হলেও তার বলার ভঙ্গিতে কোথাও কোনো উত্তেজনা নেই, কেমন যেন একটা নির্বিকার ভাব।
অস্বস্তিটা ক্রমশ বাড়ছিল। রাখহরিবাবু বুঝতে পারছিলেন এসব গাঁজাখুরি গল্প বলার পেছনে লোকটার নিশ্চয়ই কোন উদ্দেশ্য আছে। হয়ত তাঁকে একা পেয়ে কোন বিপদে ফেলতে চাইছে লোকটা।

এসব ভাবতে ভাবতেই তাঁর দেয়ালে টাঙানো একটা আয়নার দিকে চোখ পড়ল। আর দেরি করলেন না রাখহরি সান্যাল। সোজা গিয়ে আয়নাটার সামনে দাঁড়ালেন। আর তারপরেই যে অদ্ভুত ঘটনাটা ঘটল তার জন্য তিনি একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না। প্রচণ্ড চমকে উঠলেন রাখহরিবাবু। বারবার চেষ্টা করতে থাকলেন কিন্তু অনেক চেষ্টা করা সত্ত্বেও আয়নাতে নিজেকে দেখতে পেলেন না।

এবার তাঁর সামনে গোটা ব্যাপারটা একটু একটু করে পরিষ্কার হতে লাগল। মনে হল লোকটার বক্তব্যে সত্যিই কোনো ভুল নেই। ভৌতিক ব্যাপারস্যাপার সমন্ধে তাঁর যেটুকু জ্ঞান আছে তার সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যাচ্ছে ঘটনাটা।

রাখহরিবাবু যে আর প্রাণে বেঁচে নেই সেটা তিনি বুঝতে পারছিলেন। কী বলবেন বুঝতে না পেরে তিনি কিছুক্ষণ বোকার মতো ফ্যালফ্যাল করে লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।

আর সঙ্গে সঙ্গেই অনুভব করলেন যে ভয়ের ভাবটা যেন একেবারে উধাও হয়ে গেছে। ভয় পেয়ে গা শিউরে ওঠা, ঘামে শরীর ভিজে যাওয়া, গা ছমছম করা— এসব স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াগুলো কিছুই তিনি আর অনুভব করছেন না।

খানিকটা অবিশ্বাস নিয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখলেন চারিদিকের সব আলো ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছে, একটা মিশমিশে কালো অন্ধকার ছড়িয়ে পড়ছে চতুর্দিকে আর সেই ঘন অন্ধকারের মধ্যে মিশে যাচ্ছে লোকটা।

কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। দেহে যে আর প্রাণ নেই সেটা বোধহয় তাঁর মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল।

তাই নিজের বিশ্বাসটাকে পাকা করার জন্য রাখহরিবাবু নিজেকেই হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলেন। দ্রুত উঠতে থাকলেন ওপরে। আর তখনই দেখলেন তাঁর চারপাশে অসংখ্য অশরীরী আত্মা ভেসে বেড়াচ্ছে, হাওয়ায় পাক খাচ্ছে, তারপর ধোঁয়ার মতো উড়তে উড়তে শূন্যে মিলিয়ে যাচ্ছে। হাসতে হাসতে ভাসছে সেই বিদেহী আত্মারা, ইশারা করে ডাকছে তাকে। তাদের হাসি যেন কেল্লার পাথরের দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে প্রতিধ্বনিত হয়ে মিশে যাচ্ছে আকাশে বাতাসে। রাখহরি সান্যাল অন্ধকারে মিশে যেতে লাগলেন।

ভাসতে ভাসতে তিনি ভাসমান অশরীরীদের ভিড়ে মিশে গেলেন। এমন বিনা বাধায়, স্বাধীনভাবে ভেসে বেড়াতে অবশ্য তাঁর মন্দ লাগছিল না।

রাখহরি সান্যাল এখন এক কায়াহীন ছায়া।