একদিন গ্রাফোলজি ইনস্টিটিউটে একটা অদ্ভুত সমস্যা নিয়ে এল ক্লাস এইটে পড়া এক মেয়ে আর তার বাবা। মেয়েটি ব্যাডমিন্টন প্লেয়ার, ভাল খেলে। হয়তো খেলার জগতে তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। কিন্তু সমস্যা হল, মেয়ে স্ম্যাশ করতে গেলেই শাটলককটা কোর্টের বাইরে গিয়ে পড়ছে। বোঝো কাণ্ড! তা এতে গ্রাফোলজিস্টদের কী করার থাকতে পারে? গ্রাফোলজিস্টরা একটু ভ্রূ কুঁচকে, মাথা চুলকে একজন আরেকজনের দিকে তাকাতে মেয়ের বাবা আর একটু ব্যাখ্যা করলেন বিষয়টা। তাঁর মতে তার মেয়ের খেলার প্রতি উৎসাহ এবং অধ্যবসায় দুটোই দারুণ। এনার্জিও প্রচুর। মনোযোগেরও অভাব তিনি কোনওদিন দেখেনি মেয়ের মধ্যে। যদি স্ম্যাশ করতে গিয়ে মেয়ে হেরে যায়— তাহলে তিনি দুঃখ করবেন না। কিন্তু তিনি এই বিশেষ ভুলের কারণটা জানতে চান। গ্রাফোলজিস্টরা মেয়েটার হাতের লেখা নিলেন। তারপর কী হল? সেটা আলোচনা করার আগে কয়েকটা বিষয় ভাল করে বোঝা দরকার।
গ্রাফোলজিস্টরা লেখা দেখে যেহেতু মনের কার্যকলাপ বুঝতে পারে, তাই তাদের কাছে মানুষ বিভিন্ন কারণে ছুটে আসেন। যেমন ধরা যাক কেউ পড়তে বসেছে কিন্তু মনোযোগ হারাচ্ছে। পড়ার টেবিলে বসে বসেই তার মন কত শত গ্যালাক্সি ঘুরে আসছে কে জানে। আবার কেউ কেউ নিজের মধ্যে কোনও কাজ করার উদ্যম খুঁজে পাচ্ছে না। কেউ কেউ হয়তো অকারণে একটু বেশিই রেগে যাচ্ছে। খিটখিটে হয়ে উঠছে। আবার কেউ কেউ এমন আছেন যিনি সব সময়ই ভুলে যাচ্ছেন যে মোবাইল ফোন, বাড়ির চাবি ইত্যাদি কোথায় রেখেছেন। এই সব তো খুব সহজেই বুঝে যান গ্রাফোলজিস্টরা হাতের লেখা দেখে এবং হাতের লেখার কিছু অদল বদল করে সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে কমতে থাকে। কিন্তু তাই বলে ব্যাডমিন্টন?
আচ্ছা তা নয়-ই বা কেন? মানুষের সমস্ত ব্যবহারের মূলেই তো মস্তিষ্কের কার্যকলাপ, তাই না? এই ধরনের তাৎক্ষণিক ভুলের সূত্রই বা পাওয়া যাবে না কেন?
এই ধরনের তাৎক্ষণিক ভুলের কিছু কিছু উদাহরণ দেখা যায় আমাদের দৈনিক জীবনেও। হয়তো তোমাদের মধ্যেই এরকম কেউ কেউ আছে যে সাইকেল নিয়ে পাড়ায় বেরলে। এবার চালাতে চালাতে দেখলে সরু গলির মধ্যে দিয়ে একটা বড় গাড়ি ঢুকে এসেছে, তুমি ভাবলে যে তুমি পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যেতে পারবে। একটু এগিয়েই ঠিক গাড়ির পাশে কোনওরকমে সেঁধিয়েই— এই যাঃ! জায়গা নেই তো। অগত্যা দেওয়ালে ঘষা খেয়ে বা নর্দমার ওপর ঝুলে প্রাণ বাঁচিয়ে বাড়ি ফিরতে হল। এই ধরনের ঘটনা যাদের খুব বেশি ঘটে তাদেরকে আমরা বলি Accident prone। বিষয়টা খুব সহজ। এই মানুষগুলোকে তাদের মস্তিষ্ক প্রত্যেকবার ঠিক সময়ে থামার নির্দেশ দেয় না। এগোনোর মতো বা চলতে থাকার মতো ঠিক কতখানি সময় বা জায়গা আছে এটা বুঝতে পারে না এরা সব সময়।
এবার আসা যাক হাতের লেখার কথায়। যখন আমরা লিখি তখন হাত এবং কলম ধীরে ধীরে বাঁ দিকে থেকে ডান দিকে সরতে থাকে। সাথে সাথে আমাদের দৃষ্টিও বাঁ থেকে ডান দিকে সরতে থাকে, যতক্ষণে আমরা লাইনের মাঝামাঝি আসি, ততক্ষণে আমাদের চোখ আমাদের পরিষ্কার ইঙ্গিত দিয়ে দিয়েছে যে কতটা জায়গা বাকি আছে। কিন্তু ধরো সেটা মস্তিষ্ক পাত্তা দিল না— অতঃপর লাইনের শেষে এসে ধাক্কা— মানে লেখা সোজা পৃষ্ঠার বাইরে।
আমাদের ব্যাডমিন্টন প্লেয়ারেরও ওই সমস্যা হয়েছিল। তাই তার হাতের লেখা নিয়ে কিছু গবেষণার পর গ্রাফোলজিস্টরা তার খাতার প্রতিটি পাতার ডান দিক থেকে ঠিক দুই মিলিমিটার জায়গা ছেড়ে একটা করে লাল মার্জিন টেনে দিলেন। ঠিক করা হল তাকে রোজ দু’পাতা করে লিখতে হবে যা খুশি। একটাই শর্ত— লেখা যেন ওই লাল মার্জিন না পেরোয়। মেয়েটা রোজ লিখতে লাগল থাকল— এবং ধীরে ধীরে ৩ সপ্তাহ পর থেকে তার স্ম্যাশ মারার মধ্যে একটা সংযতভাব আসতে লাগল। শাটলককটা আর কোর্টের বাইরে পালায় না।
তাহলে এবার তোমাদের handwriting স্যাম্পেলগুলো আবার একবার বের করে ফেল। দেখোতো একটু, কার কার এই সমস্যা হচ্ছে। সমস্যা বলতে— যদি দেখো যে একটা A-4 size পৃষ্ঠার লেখায়, ৩ বারের বেশি, লেখা কাগজ ছেড়ে ডেস্ক অবধি পৌঁছে গেছে, তাহলে বুঝতে হবে যে তুমিও একটু Accident prone আর পেজের ডানদিকে থেকে ২ মিলিমিটার জায়গা ছেড়ে একটা মার্জিন টেনে নিয়ে রোজ লেখা অভ্যাস করলে এই সমস্যা কেটেও যাবে।
পরের সংখ্যায় ফিরে আসছি আমরা গ্রাফোলজির আরও অনেক খুঁটিনাটি নিয়ে।