Categories
রকমারিনগর |

ডাকটিকিটের অ আ ক খ

670 |
Share
| ২০ অক্টোবর, ২০২০
ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত

বিজ্ঞাপন সংস্থায় কর্মরত ও ডাকটিকিট সংগ্রাহক

চিত্র: সৌভিক গুহসরকার

ছোটবেলায় ডাকটিকিট জমানোর অভ্যাস হঠাৎ করে জন্মে গেলেও ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করেছিলাম তাকে লালন-পালন করাটা অত সহজ নয়। শিশুসন্তানকে রোজ চোখের সামনে বড় হতে দেখতে দেখতে নিজেও যেমন নতুন কিছু জানা হয়ে যায়, আমার নতুন শখটির সাথে সখ্যতা আমাকে অনেক কিছু শেখাল। যারা আমার অভিজ্ঞতার গল্প শুনে বাড়ির বড়দের ছোটবেলার কোনও ডাকটিকিটের অ্যালবামে প্রথমবার হাত পাকাতে চাইবে, তাদের হয়তো কিছুটা সুবিধা হতে পারে। যদিও দেখে শেখার চেয়ে ঠেকে শেখার দাম বেশি, তবু একটু গোড়ার গল্প ঘোড়ার মুখ থেকে শুনলে মন্দ কী!

এই ডাকটিকিটের নেশা কিন্তু আমায় শিখিয়েছে অনেক কিছু। ছোট ওইসব চৌকো-বরফি-তিনকোনা-গোল ডাকটিকিটের রকমারি গল্প মনে গভীরভাবে ‘স্ট্যাম্প’ ইমপ্রেশন রেখে গেছে। কখনও রাশিয়ার ডাকটিকিটে জেনেছি ইউরি গ্যাগারিনের গপ্পো, কখনও বা দেখেছি রেমর্স-এর কোনও বিখ্যাত পোর্ট্রেট উত্তর কোরিয়ার রঙিন ডাকটিকিটে। বিগত সময়ের বিশ্বকাপের খেলোয়াড়দের অনেককেই তো প্রথম চিনেছিলাম নিকারাগুয়ার ডাকটিকিটের সেটেই। তবে অনেকবার ঠকেও গেছি। অনেক কিছু না জেনে। যেমন ডাকমোহর-সহ টিকিটের মূল্য ছাপ-ছাড়া ডাকটিকিটের থেকে বেশি। চিঠি থেকে ডাকটিকিট নাকি তুলতে হয় খুব যত্নের সাথে। অসাবধানতায় সেটির ছোট অংশও যদি ছিঁড়ে যায় বা কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে ডাকটিকিট সংগ্রাহকদের দলে তোমার কদর যাবে কমে। প্রথমদিকে এ ব্যাপারগুলো না জানা থাকলে একটু অসুবিধা আছে বৈকি।

তবে আজ যেটা বলা আমার সবথেকে প্রয়োজনীয় বলে মনে হচ্ছে তা হল ডাকটিকিট চেনার সঠিক উপায়। সব দেশের ডাকটিকিটে কিন্তু আমাদের পরিচিত নাম লেখা থাকে না। এরকম বহু দেশই আছে যারা তাদের নাম ছাপে নিজেদের জাতীয় ভাষায়। নামকরণের এই ‘কোড-ওয়ার্ডের’ ছদ্মবেশ একবার ধরা পড়লেই বেরিয়ে পড়ে আমাদের অনেক পরিচিত দেশের নামই। তাহালে এবার একসাথে করা যাক এই নামের রহস্যভেদ।

AFGHANES— আফগানিস্তান
BELGIE/BELGIQUE— বেলজিয়াম
HELVETIA— সুইজারল্যান্ড
NIPPON — জাপান
ESPANA— স্পেন
DEUTSCHE BUNDESPOST— জার্মানি
EIRE— আয়ারল্যান্ড
PILIPINAS— ফিলিপিনস
RSA— দঃ আফ্রিকা
MAGYAR POSTA— হাঙ্গারি
OSTERREICH— অস্ট্রিয়া
POLSKA— পোল্যান্ড
MAROC— মরক্কো
HELLAS— গ্রীস
POSTE ITALIANE / ITALIA— ইতালি
ROMANA— রোমানিয়া
SVERIGE— সুইডেন
NORGE— নরওয়ে
TURKIYE POSTALARI— তুরস্ক
YAR— ইয়েমেন আরব প্রজাতন্ত্র
DPRK— উত্তর কোরিয়া
HRVATSKA— ক্রোয়েশিয়া
SUOMI— ফিনল্যান্ড
DE COTE D’IVOIRE— আইভরি কোস্ট
SHQUIPTARE— অ্যালবানিয়া

এছাড়াও বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে ইংল্যান্ড-এর কথা। এরাই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যাদের ডাকটিকিটে কোনও নাম ব্যবহার হয় না। রানির ছবি বা মুদ্রার নাম দেখেই এদের সাথে পরিচয় করতে হয়। জমাতে শুরু করলে এমন অনেক দেশের ডাকটিকিট হাতে পাবে যাদের হয়তো আর অস্তিত্ব নেই বা নামটাই পালটে গেছে— যেমন সাবেক যুগোস্লাভিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া বা সোভিয়েত সাধারণতন্ত্র। এই সম্বন্ধে আরও জানতে হলে অবশ্যই কলকাতা GPO-র ফিলাটেলি বিভাগে গিয়ে Stamp Catalogue-এর খোঁজ করতে হবে।

তাহলে আর বেশি দেরি না করে প্রবাসী বন্ধু বা আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ করো। অনুরোধ করো মাসে অন্তত একবার ইমেল না করে ডাকযোগে চিঠি পাঠাতে। দেখা যাক কত তাড়াতাড়ি নানা জানা-অজানা দেশে ভরিয়ে দিতে পারো তোমাদের ডাকটিকিটের অ্যালবামের রঙিন অ্যাটলাস-কে!