Categories
পুরনো পরগণা |

দাঁড়কাক ও ময়ূরপুচ্ছ

570 |
Share
| ১৩ অক্টোবর, ২০২০
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

১৮২০-১৮৯১। বাঙালি জাতির শিক্ষক। আধুনিক বাংলা ভাষার প্রথম রূপকার। দয়ারসাগর।

গ্রাফিক্স: কমলাকান্ত পাকড়াশী; চিত্র তথ্য: ১৮৮৫ সালে মুদ্রিত কথামালার প্রচ্ছদের অংশবিশেষ; চিত্র সৌজন্য: Wikipedia

এক স্থানে কতকগুলি ময়ূরপুচ্ছ পড়িয়া ছিল। এক দাঁড়কাক, দেখিয়া, মনে মনে বিবেচনা করিল, যদি আমি এই ময়ূরপুচ্ছ গুলি আপন পাখায় বসাইয়া দি, তাহা হইলে, আমিও ময়ূরের মত সুশ্রী হইব। এই ভাবিয়া, দাঁড়কাক ময়ূরপুচ্ছ গুলি আপন পাখায় বসাইয়া দিল, এবং, দাঁড়কাকদের নিকটে গিয়া, তোরা অতি নীচ ও অতি বিশ্রী, আর আমি তোদের সঙ্গে থাকিব না, এই বলিয়া, গালাগালি দিয়া, ময়ূরের দলে মিলিতে গেল।

ময়ূরগণ, দেখিবা মাত্র, তাহাকে দাঁড়কাক বলিয়া বুঝিতে পারিল; সকলে মিলিয়া, তাহার পাখা হইতে, একটি একটি করিয়া, ময়ূরপুচ্ছ গুলি তুলিয়া লইল; এবং, তাহাকে নিতান্ত অপদার্থ স্থির করিয়া, এত ঠোকরাইতে আরম্ভ করিল যে, দাঁড়কাক, জ্বালায় অস্থির হইয়া, পলায়ন করিল। অনন্তর, সে পুনরায় আপন দলে মিলিতে গেল। তখন, দাঁড়কাকেরা উপহাস করিয়া কহিল, অরে নির্বোধ! তুই ময়ূরপুচ্ছ পাইয়া, অহঙ্কারে মত্ত হইয়া, আমাদিগকে ঘৃণা করিয়া ও গালাগালি দিয়া, ময়ূরের দলে মিলিতে গিয়াছিলি; সেখানে অপদস্থ হইয়া, আবার আমাদের দলে মিলিতে আসিয়াছিস। তুই অতি নির্লজ্জ; এই রূপে, যথোচিত তিরস্কার করিয়া তাহারা সেই নির্বোধ দাঁড়কাককে তাড়াইয়া দিল।

পুরনো বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত; বিদ্যাসাগর রচনা সংগ্রহ, বিদ্যাসাগর স্মারক জাতীয় সমিতি