Categories
বিজ্ঞানমন্দির |

নক্ষত্রকণা

682 |
Share
| ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০
সম্রাট দাস

চলচ্চিত্র পরিচালক ও রেডিও উপস্থাপক

চিত্র: wonderfulengineering.com

স্টার। ফিল্মস্টার, রকস্টার, টিভি স্টার— মনে হতেই পারে স্টার কেন? চাঁদ, সূর্য বা গ্রহ নয় কেন? তারাদের প্রতি আমাদের এরকম অস্বাভাবিক টান কীসের? মৃত্যুর পর নাকি মানুষ তারা হয়ে যায়— সেটা শুনেই বড় হয়েছি সবাই।

এটার একটা হয়তো সম্ভাব্য উত্তর পেলাম আজকে। প্রায় দু’লক্ষ তারার আলো স্যাম্পেল করেছে APOGEE। নাসার কেপলার মিসনের অন্তর্গত পৃথিবীর মতো আরেকটা গ্রহ খুঁজতে গিয়েই নাকি এই তথ্য সামনে এসেছে। কী বলছে তারা?

পৃথিবীতে জীবনের আধার বা বিল্ডিং ব্লক্স তৈরি হয়— কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ফসফরাস আর সালফার দিয়ে। এক কথায় যাকে ডাকা হয়- CHNOPS।

সহজ ভাষায় বলতে গেলে— তারাদের আলোকে স্পেকট্রোস্কপি পদ্ধতির মাধ্যমে বিচার করার পর কিছু অবাক করা তথ্য সামনে এসেছে। CHNOPS-এর প্রত্যেকটা এলিমেন্টের আলাদা আলাদা তরঙ্গ দৈর্ঘ্য আছে যেটা দিয়ে তাদের চেনা যায়। এই স্পেকট্রোগ্রাফ মেশিনটি আছে নিউ মেক্সিকোতে যেখানে— Sloan Digital Sky Survey-এর Apache Point Observatory Galactic Evolution Experiment বা (APOGEE) দিয়ে এই কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কী এমন তথ্য সামনে এল?

এই যন্ত্রের ইনফ্রা-রেড প্রযুক্তি দিয়ে নানান তারা থেকে তার আলোর স্যাম্পেল সংগ্রহ করা হয় এবং সেই আলো থেকে তাতে মজুত বিভিন্ন এলিমেন্টকে আলাদা আলাদা করে চেনা সম্ভব। আর সেখান থেকেই জানা যাচ্ছে যে আমাদের গ্যালাক্সিতে পাওয়া প্রায় ৯৭ শতাংশ তারার অণুর (Atom) সঙ্গে আমাদের এই এলিমেন্টের মিল রয়েছে। অর্থাৎ আমরা একটা বিশাল জয়েন্ট ফ্যামেলির দূর সম্পর্কের আত্মীয়। আমাদের শরীরকে চালিত করার জন্য, বেঁচে থাকার জন্য যে অত্যাবশ্যক উপাদানগুলো প্রয়োজনীয় সেগুলোর সবকটাই হয়তো আমাদের কোনও না কোনও খসে যাওয়া তারা থেকেই পাওয়া। তার থেকেই নাকি পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের সঞ্চার ঘটে। অস্ট্রেলিয়ান ফোক গল্পে চল্লিশ হাজার বছর আগে দুই তারার প্রেমের কাহিনী প্রচলিত আছে— যেখানে দুটি তারা ভালবেসে এক রাতে পৃথিবীতে নেমে আসে এবং তারাই নাকি প্রথম পুরুষ ও নারী। আরও অনেক জটিল বিশ্লেষণ আছে এই সব রিসার্চের। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যে ভাবতে খুব ভাল লাগে যে— we are all actually made of stardust।

তাই ‘স্টার, সুপারস্টার, মেগাস্টার, রকস্টার’ হয়তো আমরা সবাই। এই কঠিন সময়ে কখনও মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়লে এই কথাটা কতটা সাহায্য করবে কাউকে জানি না, কিন্তু ভাবতেও অদ্ভুত লাগে, আমার বা আমাদের শরীরের একটা কণা হয়তো মহাশূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছিল এই কিছু বছর আগেও।

ঋণ: www.space.com