Categories
রকমারিনগর |

বাংলার প্রথম মহিলা শহীদ

1075 |
Share
| ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
অলোক কুমার বসু

শিক্ষক (ভূগোল ও ইংরেজি), জগদ্বন্ধু ইনস্টিটিউসন, বালিগঞ্জ। খেলাধূলায় আগ্রহী ও অতুৎসাহী।

চিত্র: (বাঁদিকে) প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদর, (ডানদিকে) পাহাড়তলি ইয়োরোপীয়ান ক্লাব যেটি আক্রমণ করেছিলেন প্রীতিলতা; সৌজন্য: Wikipedia

‘Dogs and natives are not allowed in this club’। পরাধীন ভারতবর্ষে এক বীরকন্যা এক ইউরোপীয়ান ক্লাবে এই নোটিশ দেখে ঠিক করল এই সাহেবদের রীতিমত শিক্ষা দেবে। মেয়েটি তখন মাস্টারদা সূর্য সেনের দলে ভর্তি হতে চাইল কিন্তু মাস্টারদা প্রথমে ফিরিয়ে দিলেন। রাজি হলেন না। কিন্তু নাছোড়বান্দা মেয়েটিকে শেষ পর্যন্ত দলে সামিল করলেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের জন্য অস্ত্র ও বোমা গোপনে সরবরাহ করার দায়িত্ব পেল বীর কন্যা প্রীতিলতা ওয়াদেদ্দার।

চট্টগ্রামের ধলঘাট পাতিয়া গ্রামে ১৯১১ সালের ৫ই মে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে প্রীতিলতা জন্মগ্রহণ করেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিলোসফিতে গ্র্যাজুয়েট হল। কিন্তু তাঁর বিপ্লবী চেতনার জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার তাঁর সম্মানপত্র প্রদান করেন না। সেই আটকে থাকা শংসাপত্র তাঁর মৃত্যুর আশি বছর পর ২০১২ সালে মরণোত্তর শংসাপত্র হিসেবে তাঁর পরিবারকে দান করা হয়।

জালালাবাদের নিরীহ ভারতবাসীদের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ক্ষিপ্ত হয়ে মাস্টারদা সেই ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। ৪০ জন সঙ্গী নিয়ে এই আক্রমণ সংগঠিত করা হল। তিনি এক পুরুষ পাঞ্জাবীর ছদ্মবেশ নিলেন ও বাকি সদস্যরা লুঙ্গি ও কুর্তা পরে দেহাতির মতো ক্লাবের কাছে গিয়ে প্রীতিলতার আদেশে আক্রমণ শুরু করল। হকচকিয়ে গিয়ে প্রথমে ইংরেজরা পালাতে শুরু করে, সেই সুযোগে ক্লাবে আগুন ধরিয়ে এরা ক্লাব ভস্মীভূত করে দিল। ততক্ষনে পুলিশে খবর গিয়ে পুলিশবাহিনী এসে বিপ্লবীদের তাড়া করল ও গুলি চালাতে শুরু করে। প্রীতিলতা সবাইকে পালাতে বলে নিজে ইংরেজ বাহিনীকে আটকে রাখার চেষ্টাতে গুরুতর আহত হলেন। কিন্তু ঘৃণ্য ইংরেজদের হাতে ধরা পরে ফাঁসিকাঠে ঝোলার চেয়ে পটাসিয়াম সাইনাইয়েড খেয়ে আত্মহত্যা করার পথ বেছে নিলেন। ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৩২ সালে, মাত্র একুশ বছরে বাংলার প্রথম শহীদ হল এই অগ্নিকন্যা। তাঁর ডাকনাম ছিল রানি। তিনি ভারতবাসীর কাছে আজও রানির আসনে বসে আছেন।