একদা, এক বাঘের গলায় হাড় ফুটিয়াছিল। বাঘ বিস্তর চেষ্টা পাইল, কিছুতেই হাড় বাহির করিতে পারিল না; যন্ত্রণায় অস্থির হইয়া, চারি দিকে দৌড়িয়া বেড়াইতে লাগিল। সে যে জন্তুকে সম্মুখে দেখে, তাহাকেই বলে, ভাই হে! যদি তুমি, আমার গলা হইতে, হাড় বাহির করিয়া দাও, তাহা হইলে, আমি তোমায় বিলক্ষণ পুরস্কার দি, এবং চিরকালের জন্যে, তোমার কেনা হইয়া থাকি। কোন জন্তুই ভয়ে সম্মত হইল না।
অবশেষে, এক বক পুরস্কারের লোভে, সম্মত হইল, এবং বাঘের মুখের ভিতর, আপন লম্বা ঠোঁট প্রবেশ করাইয়া দিয়া, অনেক যত্নে ঐ হাড় বাহির করিয়া আনিল। বাঘ সুস্থ হইল। বক পুরস্কারের কথা উত্থাপিত করিবা মাত্র, সে, দাঁত কড়মড় ও চক্ষু রক্তবর্ণ করিয়া, কহিল, অরে নির্বোধ! তুই বাঘের মুখে ঠোঁট প্রবেশ করাইয়া দিয়াছিলি। তুই যে নির্বিঘ্নে ঠোঁট বাহির করিয়া লইয়াছিস, তাহাই ভাগ্য করিয়া না মানিয়া, আবার পুরস্কার চাহিতেছিস। যদি বাঁচিবার সাধ থাকে, আমার সম্মুখ হইতে যা; নতুবা, এখনই, তোর ঘাড় ভাঙ্গিব। বক শুনিয়া, হতবুদ্ধি হইয়া, তৎক্ষণাৎ তথা হইতে প্রস্থান করিল।
পুরনো বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত; বিদ্যাসাগর রচনা সংগ্রহ, বিদ্যাসাগর স্মারক জাতীয় সমিতি