Categories
খেলার মাঠ |

বিস্ময়কর বলাই চ্যাটার্জি

236 |
Share
| ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১
শুভেন সরকার

চিকিৎসক ও ক্রীড়া উৎসাহী

চিত্র: (বাঁদিক থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় ছবি) বলাই চ্যাটার্জি; সৌজন্য: themohunbaganac.com; (ডানদিকে) শিষ্য চুনী গোস্বামীর সঙ্গে গুরু বলাই চ্যাটার্জি; সৌজন্য; খেলতে খেলতে, চুনী গোস্বামী

আমি তখন কলেজে পড়ি। সিটি ক্লাবের হয়ে হকি খেলি। একদিন খেলা শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে দেখি প্রেস ক্লাবের টেন্টের পাশে একটা ছোট মাঠে কিছু ছেলে ফুটবল খেলছে। আর অদ্ভুত ব্যাপার— তারা প্রত্যেকেই একপায়ে বুট পরে খেলছে। আর এক দশাসই চেহারার বৃদ্ধ একটা চেয়ারে বসে তাদের উপদেশ দিচ্ছেন। এইরকম একটা অদ্ভুত ব্যাপার দেখে আমি ওই ভদ্রলোকের চেয়ারের পিছনে দাঁড়িয়ে গেলুম। প্রথমে ভাবলুম এরা বোধহয় প্রথম বুট পরে খেলছে নয়তো এদের বুটের সংখ্যা কম। তারপরে লক্ষ্য করলুম যে কেউ ডান পায়ে বুট পরেছে আর কেউ বাঁ পায়ে। আমি অবাক হয়ে দেখছি আর তখনই ওই বৃদ্ধ ঘুরে তাকালেন। দেখি উনি স্বনামধন্য শ্রী বলাইদাস চট্টোপাধ্যায়। বলাই চ্যাটার্জি নামে বেশি বিখ্যাত।
উনি বাজখাঁই গলায় জিগ্যেস করলেন, কী দেখছ?
আমি বললুম, এরা একপায়ে বুট পরে খেলছে কেন তাই ভাবছি।
উনি বললেন খেলাধুলো করো?
বললুম হ্যাঁ, হকি খেলি।
উনি বললেন বেশ বেশ। আর ফুটবল?
বললুম, চশমার জন্যে খেলতে পারি না।
তখন উনি বললেন, এই ছেলেরা দু’পায়ে সমান জোরে বল মারতে পারে না। তাই ওদের দুর্বল পায়ে বুট বেঁধে খেলতে অভ্যাস করাচ্ছি। এরপর ওরা দু’পায়েই সমান জোরে বল মারতে পারবে।

এই হলো বলাই চ্যাটার্জি, ভারতীয় ফুটবল টিমের প্রথম কোচ। ১৯৪৮ সালের অলিম্পিকে ভারতের কোচ। মোহনবাগানের দুর্ধর্ষ সেন্টার হাফ— যাঁকে সাহেবরা ভয় পেত। সাহেবরা খুব মেরে খেলত, কিন্তু বলাই চ্যাটার্জির পাশে ঘেঁষত না। লাফিয়ে হেড দিতে উঠতেন যখন সাহেবদের বিরুদ্ধে, দেখা যেত দু’পাশে দুই সাহেব মাটিতে ধরাশায়ী।

উনি বক্সিং চ্যাম্পিয়ন-ও ছিলেন। খেলা ছেড়ে দেবার পর উনি কোচিং শুরু করেন। মোহনবাগান তথা বাংলা তথা ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফুটবল খেলোয়াড় চুনী গোস্বামী এঁর হাতেই তৈরি।

বলাই চ্যাটার্জি জন্মে ছিলেন ১০ মার্চ ১৯০০ সালে আর ওঁর মৃত্যু হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। মরণোত্তর বলাই চ্যাটার্জিকে মোহনবাগান রত্ন উপাধি দেওয়া হয় ।