Categories
রকমারিনগর |

ভিয়েতনামের টারজান

534 |
Share
| ৯ জুলাই, ২০২১
ঝিলমিল বসু

প্রাক্তন রেডিও উপস্থাপক ও বিজ্ঞাপনকর্মী

চিত্র সৌজন্য: Asia Times

টারজানের গল্প তো আমরা সবাই পড়েছি। সিনেমার পর্দায় বা কার্টুনে টারজান চরিত্রটি ছোট-বড় নির্বিশেষে সকলেরই খুব প্রিয়। কিন্তু বাস্তবেও যদি সত্যিকারের টারজানের খোঁজ পাওয়া যায়, আমরা কি অবাক না হয়ে পারব? এমনই এক অবাক করা টারজানের খোঁজ পাওয়া গেছে ভিয়েতনামে। সত্যিকারের এই টারজানের আসল নাম হো ভান লাং। ৪৯ বছরের এই ব্যক্তি প্রায় ৪১ বছর ধরে জঙ্গলে বাস করেছেন। ভাবা যায়?

১৯৭২ সালের ভয়ঙ্কর ভিয়েতনাম যুদ্ধে হো ভান লাংয়ের পরিবার ছারখার হয়ে যায়। আমেরিকার ফেলা বোমে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায় হো ভান লাংয়ের মা ও দুই ভাই। যুদ্ধের সেই ভয়াবহতা থেকে কোনওরকমে প্রাণপণে পালান হো ভান লাংয়ের বাবা। সঙ্গে ছোট্ট লাং ও তার দুই ভাই। প্রাণ হাতে নিয়ে তারা কোয়াং নাগাইয়ের এক ঘন জঙ্গলে আস্তানা নেন।

জঙ্গলের মধ্যেই আস্তে আস্তে তারা খুঁজে বের করেন বেঁচে থাকার রসদ। খাবার বলতে জঙ্গলের মধু, ফল ও পশুপাখি। আশ্রয় বলতে জঙ্গল থেকে নানা সরঞ্জাম সংগ্রহ করে নিজেদের বানানো ঘর। রান্নার বাসনপত্র, ঘরের টুকটাক সরঞ্জাম সব বনজ সম্পদ দিয়ে নিজে হাতে তৈরি। মানুষের থেকে বহু দূরে ঘন জঙ্গলে পশুপাখিদের সঙ্গে বাস করতে করতে কোথা দিয়ে যে ৪১ বছর পার হয়ে গিয়েছে তা তারা কেউই জানেন না!

কৌতূহল হচ্ছে তো এই ভেবে যে এই ৪১ বছর ধরে বেঁচে থাকার জন্য লাং কী কী খেয়েছে? সাপ, বাঁদর, টিকটিকি ইত্যাদি নানা প্রাণীর মধ্যে লাংয়ের সবথেকে প্রিয় ছিল ইঁদুরের মাথা! ভাবতেই অবাক লাগছে তো?

ঘন জঙ্গলে থাকাকালীন আশেপাশে কোনও মানুষ দেখলেই দৌড়ে পালাত লাং ও তার পরিবার। অবশেষে ২০১৫ সালে এক ফটোগ্রাফার অনেক কষ্টে তাদের খুঁজে বার করেন। এখন তারা তিনজন ওই জঙ্গলের খুব কাছেই একটা ছোট বাড়িতে থাকে। লাংয়ের বাবা সারা জীবন ধরে এই আতঙ্কে কাটিয়েছেন যাতে কোনওদিন আর গ্রামের বাড়িতে ফিরতে না হয় কারণ তিনি এখনও পর্যন্ত বিশ্বাসই করেন না যে ভিয়েতনামের ভয়ঙ্কর সেই যুদ্ধ এখনও শেষ হয়েছে!

ভিয়েতনামের টারজান লাং মনুষ্যসমাজের রীতিনীতি, নিয়মকানুন কিছুই জানে না, কিছুই বোঝে না। প্রকৃতির পবিত্রতায় এতগুলো বছর কাটিয়ে খাঁটি সরল তিনটি মানুষ অপরকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ঋণ: Dna India, Gulf Today