Categories
ভাষাপুকুর |

রবীন্দ্রনাথের গল্প

554 |
Share
| ৯ মে, ২০২১
অসিতকুমার হালদার

রবীন্দ্রনাথের মেজদিদি শরৎকুমারী দেবীর নাতি

চিত্র সৌজন্য: Wikipedia

. . . রবিদাদা ছিলেন শৈশবে বাড়ির সকলেরি প্রিয়, বিশেষ তাঁর বড় ভাইবোনদের কাছে। শুনেছি তাঁর অন্নপ্রাশনের সময় তাঁকে চন্দন-চর্চিত ক’রে, তাঁর আসনের চারধারে আলপনা কেটে এবং দীপ্ত দীপের সার দিয়ে সাজিয়ে ধূপবাসিত করা হয়েছিল। জাতিস্মর তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় তাঁর সর্বকনিষ্ঠ পুত্রের ভগবৎ উপাসনা অন্তে নামকরণ করলেন― ‘রবীন্দ্রনাথ’। পবিত্র মনে তাঁর পিতা বলেছিলেন, “এই শিশুর নাম ‘রবীন্দ্রনাথ’ রাখা হোল, এঁর চারধারে স্থাপিত দীপ শ্রেণীর মতই ইনি উজ্জ্বল প্রতিভায় জগৎ উদ্ভাসিত করবেন এবং ধূপবাসিত এই কক্ষের মত এঁর যশ-গৌরব জগতে বিস্তারিত হবে।” পিতার এই আশ্চর্য ভবিষ্যৎ বাণী রবিদাদা তাঁর জীবনে সফলতা-মণ্ডিত করে রেখে গেছেন। এই ঘটনার সঙ্গে তুলনা করা যায়, যখন অমরকোটে আকবর জন্মালেন, তখন নিঃস্ব পলাতক তাঁর পিতা সম্রাট হুমায়ুন পুত্রের জন্মোৎসবে একমাত্র সম্বল কস্তূরী নিকটবর্তী কয়েকটি বিশ্বস্ত সহচরদের বিতরণ করে বলেছিলেন, “এই কস্তূরীর গন্ধের মতই জাতকের নাম পৃথিবীতে বিকীর্ণ হবে।” কথা প্রসঙ্গে নিজের ছেলেবেলার কথা বলে আমাকে উৎসাহিত করবার জন্য একবার কবি বলেছিলেন, “অপরে তোর কাজের প্রশংসা করবে এই ভেবে কাজ করিসনে। ধর যদি কেউ বাল্যে আমার পিঠ চাপড়ে উপদেশ দিতেন, ‘রবি কবি হবি, কবিতা লেখ’― তাহলে কি আমি এই কাজে প্রবৃত্ত হতুম? জানিস― যখন কিছু বড় কাজে হাত দিতুম, দিদিদের বলে রাখতুম! যেমন বাঘের খাঁচায় খাবার দেয়― তেমনই আমাকে না ঘাঁটিয়ে আমার ঘরে একবাটি শুধু ডাল রেখে যেতে।”

. . . রবিদাদা শিশুদের প্রতি ভালবাসার কথা এবারে বলি! আমি এবং আমার ভাইয়েরা বাল্যকালে যখন মা-বাবার সঙ্গে কখনো কখনো জোড়াসাঁকোয় এসে দিদিমার (শরৎকুমারী দেবী) কাছে থাকতুম তখন আমাদের আকর্ষণ ছিল রবিদাদার প্রতি। তাঁর আমাদের নিয়ে একটা খেলা ছিল, এক নিঃশ্বাসে ‘ললিতলবঙ্গলতা-পরিশীনকোমলমলয়সমীরে’ ধরণের অনেক লম্বা লম্বা সমাসযুক্ত কথা বলার অভ্যাসের দ্বারা আমাদের জিভের জড়তা কাটানোর খেলা। আবার আমাদের সহজবুদ্ধির পরীক্ষার ছলে নানা প্রকার প্রশ্ন করতেন, যেমন: ‘পরস্মৈপদী ভাল না আত্মনেপদ?’ ‘কান বড় কি চোখ বড়?’ ইত্যাদি। গল্পবলার এক কৌশল ছিল তাঁর, প্রথমে তিনি নিজে হয় তো আরম্ভ করলেন ‘এক ছিল রাজা, এক ছিল রানী’ তারপর আমাদের একে একে এক জনের পর একজনকে বাকি গল্পটা বানিয়ে জুড়ে দিয়ে বলে যেতে হত; তারপর শেষ করতে না পারলে তিনি নিজে গল্পটাকে সীমানায় এনে দিতেন। বহুকাল পরে আশ্রমে তাঁর নিকট থাকার কালে সন্ধ্যাবেলায় মাঝে মাঝে শিশুবিভাগে শালবীথিকাগৃহে গিয়ে রবিদাদা আর আমি . . . শিশুদের কাছে এই প্রকার গল্পরচনা খেলা করতাম।

. . . রবিদাদা খাবার টেবিলে ছোটদের আকর্ষণ ছিল রবিদাদার মাখা ফলার। মা’রাও উপভোগ করেছেন, আমরা তাঁর নাতিরাও উপভোগ করেছি। ক্ষীর, কমলালেবু, কলা, পেস্তাবাদামের সঙ্গে জ্যাম, জেলি বা আমসত্ত্ব মেখে উপাদেয় খাদ্য তৈরি করতেন। . . .

ঋণ: সাবেকী কথা, অসিতকুমার হালদার