Categories
পুজোর খাতা ২০২৪ |

সুন্দরবনের ঘটনা

180 |
Share
| ৪ অক্টোবর, ২০২৪
অগ্নীশ্বর সরকার

কৃতজ্ঞতা/ উইকিপিডিয়া

ভোরের সুন্দরবন। আকাশের পূবপাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে রবিকর। রক্তিমাভ আলোর ছোঁয়ায় পুলকিত নদীর জলও। গাছে গাছে চিৎকার করে দিনের শুরুর জানান দিচ্ছে কত দেশি বিদেশি পাখির দল। তেষ্টা মেটানোর আশায় হরিণের পাল তৃপ্তির চুমুক দিচ্ছে শীতল বহমান নদীতে। সুন্দরী গাছের আগায় পানকৌড়ি শিকারের আশায় বসে আছে। সুন্দরী সুন্দরবন। প্রকৃতির ফুসফুস। বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র।

কুয়াশামাখা নদীর বুক চিড়ে ভটভট শব্দ তুলে এগিয়ে চলেছে ছোট্ট কাঠের লঞ্চ ‘এম ভি তারকবাবু’।
নরম সকালের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য লঞ্চের ডেকে কাঠের চেয়ারে বসে আছে তুতুলরা।
তুতুলরা মানে তুতুলের বাবা ইন্দ্রজিৎ, মা শ্যামলী, ইন্দ্রজিতের বন্ধু শ্যামুকাকু, চন্দ্রাণী-কাকিমা আর সৃজন।
সৃজন আর তুতুল মিত্র ইন্সটিটিউশানের ক্লাস এইটে পড়ে। ইন্দ্রজিৎ আর শ্যামু কলকাতা হাইকোর্টের নামী উকিল।
কর্মব্যস্ত জীবন থেকে ছুটি ম্যানেজ করে পরিবার নিয়ে সুন্দরবন ঘুরতে এসেছেন।
গতকাল গোসাবার হোটেলে ছিলেন। রাতে ছিল ইলিশ-উৎসব। রাত্রে হোটেলের পক্ষ থেকে আদিবাসী নাচেরও বন্দোবস্ত করা হয়েছিল।
তুতুল আর সৃজনের সে কী নাচ! ওরা বেড়ে উঠছে কংক্রিটের জঙ্গলের মধ্যে; এমন সবুজ বন্য পরিবেশে ওদের সহজাত আনন্দপ্রবৃত্তি জেগে উঠবে তাতে আশ্চর্যের কী আছে!
এখনও আকাশে মেঘের লেশমাত্র নেই। লঞ্চের সাথে রাঁধুনিও আছে। যদিও ওরা কোনো ট্যুর অপারেটরের সাথে আসেনি, তথাপি লঞ্চের মালিকের সাথে কথা বলে স্থানীয় একজনকে ওদের সাথে নিয়েছে, যাতে সে প্রয়োজনমতো চা-টিফিনের বন্দোবস্ত করে দিতে পারে।
আজ ওদের গন্তব্য সজনেখালি।

লঞ্চে ওঠামাত্রই একপ্রস্থ চা হয়ে গেছে। দ্বিতীয়বারের জন্য চায়ের কেটলি নিয়ে লঞ্চের ডেকে এলো গৌর অর্থাৎ রাঁধুনি ছেলেটি। কাপে চা ভরে রেখে দিল লঞ্চের মাঝের চওড়া বেঞ্চের উপর।
শ্যামুকাকু সকলকে চা সার্ভ করে নিজের কাপটা নিয়ে কেটলি রাখা বেঞ্চের উপর বসে পড়লেন।
‘তুতুল আর সৃজন তোরা শোন। এই সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বন প্রায় দশ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে আছে, যার মধ্যে বাংলাদেশে আছে ছেষট্টি শতাংশ আর পশ্চিমবঙ্গে চৌত্রিশ শতাংশ। এখানে দুটি গাছ সবচেয়ে বেশি দেখতে পাবি, সুন্দরী আর গেওয়া। মোট বনভূমির প্রায় একত্রিশ শতাংশ মাত্র জলাভূমি। এখানে প্রায় চারশো তিপান্ন ধরণের বন্যপ্রাণী স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারে’, বললেন শ্যামুকাকু।

চা সহযোগে গল্প করতে করতে সময় কোথা দিয়ে কেটে গেল! ম্যানগ্রোভ ঘেরা নদীপথ ধরে লঞ্চ এসে ভিড়ল সজনেখালিতে। কংক্রিটের জেটি বেয়ে সকলেই নেমে এল। এখানে একটা সরকারি কটেজে ওদের থাকার ব্যবস্থা আগে থেকেই করা আছে। এখন সজনেখালি ইকো-পার্ক ঘুরে হোটেলে ফেরা। সেখানে লাঞ্চ সেরে জমাটি আড্ডা দেওয়ার প্ল্যান আছে ইন্দ্রজিৎদের। ইত্যবসরে গৌর মাটন আর ভাত রান্না করবে।

তিনশো তেষট্টি বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে আছে এই অভয়ারণ্য। এখানে অবশ্য বেশিরভাগ জায়গাতেই মানুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আছে। ইকো-পার্ক প্রবল উপভোগ্য হয়েছে তুতুলদের কাছে। ওখানেই জীবনে প্রথমবার এতো কাছ থেকে হরিণ আর কুমির দেখতে পেয়ে সৃজন তো মাঝে বায়নাই জুড়ে দিয়েছিল হরিণের সাথে খেলার। শেষে তুতুলের বাবা পুলিশের ভয় দেখিয়ে কোনোক্রমে ওকে নিরস্ত করেছে। ‘অনেক ঘুরেছ সব। কটেজে চলো দেখি বাপু। সেই ভোর থেকে উঠিয়ে দিয়েছো আমাদের। ঘরে গিয়ে, খেয়ে দেয়ে নিয়ে টেনে একখান ঘুম দেবো আমি—’ হাসতে হাসতে বললেন চন্দ্রাণী-কাকিমা।

সৃজনের মায়ের কথায় সম্মতি জানিয়ে সকলে কটেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। এখন অফ-সিজন। পর্যটকও হাতে গোনা। তুতুলরা ছাড়া ওখানে থাকার লোক কেউ নেই।
আসলে রাতে দক্ষিণরায়ের গর্জন শোনার সৌভাগ্যটা পরখ করার জন্য শ্যামুকাকুই এখানে থাকার প্রস্তাবটা দিয়েছিলেন। সকলে এক কথায় রাজিও হয়ে গেছে।
দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে তুতুল আর সৃজনের মা সোজা বিছানায় চলে গেলেন; নিদ্রা-দেবীর আরাধনা করতে।
ইন্দ্রজিৎরা পাশের ঘরে আড্ডা দিতে বসে গেলেন। তুতুলরা গৌরের সাথে বল নিয়ে নেমে পড়ল কটেজের সামনের মাঠে।
আশেপাশেই কোথাও একটা পাখি অবিশ্রান্তভাবে টি টি করে ডেকেই চলেছে।

দুপুর থেকেই পশ্চিমের আকাশে মেঘ জমেছে। ক্রমশ সেটা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। হয়তো একটু বাদে এই গহীন অরণ্যের মাঝে আকাশ উজাড় করে বারিধারা নামবে। বৃষ্টিভেজা হয়ে আরও রূপ খুলবে সুন্দর এই বনের।
তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে গোটা সজনেখালি জুড়ে। মুহুর্মুহু বাজের আওয়াজে জানালার কাঁচগুলো ঝনঝন করে উঠছে।
আলো দেখে মনে হচ্ছে, শত শত ক্যামেরার ফ্ল্যাশ যেন একসাথে জ্বলে উঠছে। চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছে বৃষ্টিভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ।
বাজের আওয়াজেই অনেক আগেই ঘুম ভেঙে গেছে শ্যামলীর। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে কাঁচের জানালা দিয়ে তিনি মগ্ন হয়ে প্রকৃতির এই রুদ্ররূপ দেখছেন।
‘দিদি সৃজনরা কোথায়?’ চন্দ্রাণীর গলার আওয়াজে সম্বিৎ ফিরল শ্যামলীর।
‘ওঘরে আছে হয়তো।’ বাইরের দিক থেকে মুখ না সরিয়েই বললেন শ্যামলী।
‘ওদের নিয়ে আসি এঘরে। যা বাজ পড়ছে চারিদিকে।’ বলে ধীর পায়ে পাশের ঘরের দিকে এগোলেন চন্দ্রাণী-কাকিমা।

***

হাত-পা-মুখ বাঁধা অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করল তুতুল। মাথায় অসহ্য ব্যথা। বাইরে অবিরাম বারিধারা ঝরে যাচ্ছে।
সময়-সময় বিদ্যুতের ঝলকানি জানালার ফাঁক দিয়ে ঘরে আসছে। বারকয়েক চিৎকার করার চেষ্টা করল তুতুল। কণ্ঠনালী দিয়ে আওয়াজ বাইরে পর্যন্ত এসে পৌঁছতে অক্ষম।
মেঝেতে একপাশ ফিরে পড়ে আছে সে। উঠে দাঁড়ানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সৃজন কোথায় কে জানে? বাবা-মা এখন কী করছে কে জানে? গলার কাছে একদলা কান্না আটকে আছে।
অগত্যা দুপুরের ঘটনাটা মনে করার চেষ্টা করল তুতুল।

দুপুরে তিনজনে সামনের মাঠে ক্রিকেট খেলছিল। সৃজন ব্যাট করছিল, গৌরদা বল করছিল আর তুতুল ফিল্ডিং। গৌরদার একটা লোপ্পা বল সৃজন উড়িয়ে দিল লেগষ্ট্যাম্পের দিকে। কটেজের সীমানা ছাড়িয়ে বল গিয়ে আছড়ে পড়ল পাশের জঙ্গলে। আকাশে তখন কৃষ্ণমেঘ গম্ভীর-স্বরে ডমরু বাজাচ্ছে। থেকে থেকেই চারিপাশ বিদ্যুতের আলোতে ভেসে যাচ্ছে। সে সবকে তোয়াক্কা না করে তিনজনেই ছুটল বল আনতে। একটা ঝোপের ভিতর নিচু হয়ে সে যখন বল খুঁজছিল, ঠিক তখনই নাকে ভেসে এলো একটা সুমিষ্ট গন্ধ। কেউ যেন পিছন থেকে নাকে একটা রুমাল চেপে ধরল; তারপর . . .।

দরজার বাইরে একটা অসংলগ্ন পায়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ক্যাঁচচচচ শব্দ করে দরজাটা খুলে গেল। তুতল চোখটা বন্ধ করে ফেলল। একদলা আওয়াজ তুতুলের মুখের ওপর আছড়ে পড়েছে।
তুতল শুনতে পেল, আগন্তুক কাউকে চাপা স্বরে বলছে, ‘ছোঁড়াদুটো এখনো ঘুমোচ্ছে ওস্তাদ।’
‘ঘুমোক। তুই দরজাটা বন্ধ করে চলে আয়।’ গলার স্বরটা বড্ড চেনা লাগলো তুতুলের। আরে এ তো গৌরদার গলার আওয়াজ! কী হল কেসটা! ও বলল, ‘ছোঁড়াদুটো’, মানে সৃজনও এ ঘরে আছে। কিন্তু থাকলে কী হবে, এদের হাতে ওরা পড়লই বা কীভাবে, আর এখান থেকে বেরবেই বা কীভাবে? একবার কি সৃজনকে নামধরে ডাকবে? চোখ খুলল তুতুল।

বেশ খানিকক্ষণ থাকার পর অন্ধকারটা চোখ সওয়া হয়ে গেছে। গোটা ঘরটা এখন আবছাভাবে চোখের সামনে ধরা দিয়েছে। ঘরের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটা ভর্তি বস্তা রাখা আছে। সৃজন কি এ’ঘরেই আছে?
চারিদিক নিশ্চুপ। কোনো আওয়াজ নেই। ক্রিকেট খেলতে যাওয়াটাই কাল হয়েছে। খাওয়ার পর মা বলেছিল একটু বিশ্রাম নিতে। শোনেনি। চেষ্টা করে শরীরটাকে একটু ঘোরাল তুতুল। ঘরের অপরদিকটা দেখার চেষ্টা শুরু করল।
ওই বস্তাটার আড়ালে কী যেন একটা দেখা যাচ্ছে! একটা বসে থাকা মানুষের মাথা বলেই মনে হচ্ছে। তাহলে ওটা কি সৃজন? একবার চেষ্টা করবে আষ্টেপৃষ্ঠে দড়ি দিয়ে জড়ানো শরীরটাকে ওখানে নিয়ে যাওয়ার? যদি কেউ দেখে ফেলে বা ওইটা সৃজন না হয় . . .
পরিণতি নিয়ে আর ভাবতে পারছে না তুতুল। কেনই যে ওকে এখানে আটকে রেখেছে, কীই বা করবে, কোনো প্রশ্নেরই উত্তর জানা নেই তুতুলের! মুক্তি পাওয়ার জন্য একটা শেষ চেষ্টা করবে কি সে?
স্কুল স্কাউটের সদস্য তুতুল বেশ কিছুক্ষণের শারীরিক কসরত করে অবশেষে পৌঁছল অজানা ওই ব্যক্তির কাছে। হাতদুটো তুতুলের মতোই পিছমোড়া করে বাঁধা আছে বলেই মনে হচ্ছে। মাথাটা নিচের দিকে নামানো।
বোঝাও যাচ্ছে না ওই ব্যক্তি অজ্ঞানে না স্বজ্ঞানে আছে! আরও কাছে গিয়ে নিজের শরীরটা দিয়ে ওই ব্যক্তিকে একটা ধাক্কা দিল তুতুল। কোঁক করে একটা আওয়াজ করে মাটিতে পড়ে গেল সে। আওয়াজটা চেনা তুতুলের।
দেহটাকে মেঝের মধ্যে দিয়ে ঘষটাতে ঘষটাতে হাতের তালুর দিকটা ওই ব্যক্তির মুখের কাছে নিয়ে গেল তুতল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওর মুখের বাঁধনটা খুলে ফেলল তুতুল।
ফিসফিস-স্বরে ওই ব্যক্তি বলে উঠল, ‘তুতুল!’

ঘষটাতে ঘষটাতে শরীরের অনেক অংশে চোট পেয়েছে তুতুল। শরীরের ব্যথা ভুলে এবার সৃজনের হাত খোলার চেষ্টা শুরু করল তুতুল।
এভাবে কতক্ষণ কেটে গেছে জানা নেই কারোরই। অনেক কষ্ট সহ্য করে দুজনেই মুক্ত করে ফেলেছে দুজনকে। ওদের ভাগ্য ভালো বলতে হবে; এর মধ্যে কেউই ওই ঘরে আসেনি।
‘এখান থেকে বেরনোর একটা প্ল্যান করতে হবে তুতুল। জানিনা বাবা-মা-রা কোথায় আছে, কীভাবে আছে!’
ঘরের দেওয়াল ভেঙে বেরনোর মতো ক্ষমতা ওদের নেই, কিন্তু ছাদের টালি সরিয়ে বেরনোর একটা চেষ্টা করা যেতেই পারে। কেউ সেই সময়ে যদি কেউ ঘরের মধ্যে চলে আসে? যদি ধরা পড়ে যায়! রিস্ক তো নিতেই হবে। এরা কেন ওদের ধরেছে, আর কেনই বা আটকে রেখেছে, পুরোটাই অজানা।

গভীর রাত। চারদিকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। হয়তো অপহরণকারীরা ঘুমোচ্ছে!
ঘরের মধ্যে আগত বৃষ্টির জলের ধারা বুঝিয়ে দিয়েছে টালির চালের কোন অংশটা দুর্বল। আর এটা খুঁজে বের করে ফেলেছে দুই বন্ধুতে।
ঘরের মধ্যে থাকা বস্তাগুলোকে ঘরের একটা নির্দিষ্ট জানালার নিচে জড়ো করল ওরা। বস্তাগুলোর মধ্যে ঠেসে ঠেসে খড় ভরা আছে। সেগুলির সহায়তায় প্রথমে টালি এবং পরবর্তীতে ফাঁকা আকাশের নিচে পৌঁছল ওরা।
বৃষ্টিতে ভিজে সপসপে হয়ে গেছে দুজনেই। অচেনা জায়গা। কোথায় যেতে হবে কোনো ঠিক নেই। দুজনেরই গায়ে বেশ কিছু ক্ষতও তৈরি হয়েছে। থেকে থেকেই চিড়বিড় করে উঠছে সেগুলো।

বৃষ্টির মধ্যে অনতিদূরে একজোড়া চোখ অন্ধকারের মধ্যে অন্ধকারের মধ্যে জ্বলজ্বল করছে। ওটা কি দক্ষিণরায়? ভয়ে হাত-পা বুকের মধ্যে সেঁধিয়ে গেছে তুতুলের।
সৃজনের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে তুতুল জিজ্ঞেস করল, ‘ওটা কী রে?’
অন্ধকারের মধ্যে সৃজনও আঁতকে উঠেছে।
‘শুনেছি বাঘ ত্রিশ ফুট পর্যন্ত লাফ দিতে পারে। আমরা তার থেকেও কম উচ্চতায় আছি। সব গেল রে তুতুল।’ ফিসফিসিয়ে বলল সৃজন।
‘সৃজন এভাবে বসে থাকলে হবে না রে। চারিদিকে বৃষ্টি পড়ছে। এইসময় বাঘেরা দূর থেকে গন্ধ পাবে না। আমরা সাবধানে বাড়ির পিছন দিক দিয়ে নেমে পড়ি। ওদিকে একটা গাছ আছে বলেও মনে হচ্ছে। একটু হলেও সুবিধা হবে।’
খুব সন্তর্পণে ওরা গাছ বেয়ে বাড়ির পিছন দিক দিয়ে নেমে পড়ল মাটিতে। কাদায় পা আটকে যাচ্ছে। বাড়ির সামনের ঘরের ভিতর থেকে আলোর হলুদ ছ’টা এসে মাটিতে পড়ছে।
দিকবিদিকশূন্য হয়ে ছুটতে লাগলো দুই বন্ধুতে। ওরা জানে না বাবা-মায়ের সাথে আর কোনোদিনও দেখা হবে কিনা! ওরা জানে না স্কুলের বেঞ্চে আবারও পাশাপাশি বসতে পারবে কিনা!
কাদায় পা আটকে যাচ্ছে। ধারালো পাথরের টুকরোতে পা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। তবুও শ্বাপদসঙ্কুল এই পরিবেশে ক্লান্ত–অবসন্ন দুটো ছেলে ছুটে চলেছে; বাঁচার আশায়।

এভাবে কতক্ষণ ছুটে-ছিল জানা নেই ওদের! ক্ষীণ ধারার আলো চোখে পড়ল তুতুলের। খিদে আর এতক্ষণের পরিশ্রমে শরীর কাতর। শুধুমাত্র মনের জোরে ছুটে চলেছে ওরা।
অচেতন শরীরদুটো আছড়ে পড়ল সুন্দরবনের বিট অফিসের বারান্দায়। সাথে সাথেই ওদের উদ্ধার করে অফিসাররা।
লোকাল থানার সাথে যোগাযোগ করে তুলে দেওয়া হয় ওদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ওরা এখন স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত। একটা চোরাচালানকারী-দলকে আদালতের বিচারে শাস্তি পাইয়ে দিয়েছিল তুতুলের বাবা; তারই কোপ পড়েছিল তুতুলদের ওপর।
গৌর ছিল সেই দলের সহযোগী। যে ঘরে ওদের আটকে রাখা হয়েছিল সেখানে পাচার করার জন্য বন্য-পশুর চামড়া মিলেছিল।
আর মিলেছিল ঘরের অনতিদূরে দক্ষিণরায়ের পায়ের ছাপ।
গোটা দলটাকেই পুলিশ ধরতে সক্ষম হয়েছিল তুতুলদের জন্যই।
আগামীতে তুতুল আর সৃজনকে পুরস্কৃত করার ইচ্ছে আছে পুলিশ দপ্তরের।