১
হিমেলীদি ভূতে ভয় পান। শুধু ভয় পান বললে ভুল হবে। প্রচণ্ড ভয় পান। সে ভয়ের কথা শুনলে অনেকেই হেসে গড়িয়ে পড়ে। তবু নিজে কিছুতেই ভূতের ভয় কাটাতে পারছেন না। আমাকে সেই প্রথম আলাপের দিনই বলেছিলেন। একা একা থাকেন বলেই বোধহয় আজকাল আরও ভয় পান।
হিমেলীদি আমার চেয়ে অনেকটাই বড়। বয়স কত জিগ্যেস করলে মুচকি হেসে বলেন ‘তুই যা ভাববি, আমি তাই। কুড়ি ভাবলে কুড়ি। পঞ্চাশ ভাবলে পঞ্চাশ। কিন্তু আমাকে দিদি বলবি। কেমন?’ আচ্ছা কী মুশকিল! এইভাবে ভাবা যায়? মাঝামাঝি একটা কিছু হতে পারে না? কিন্তু বয়স নিয়ে তো আর বড়দের সঙ্গে কথা এগোয় না। আমি মন দিয়ে লক্ষ্য করে দেখি হিমেলীদির কোঁকড়ানো একঢাল চুল। মা দুগগার মতো পানপাতা মুখ। টুকটুকে ফর্সা রঙ। বেঁটেখাটো মানুষটি খুব ছটফটে। একদণ্ড স্থির হয়ে বসেন না কোথাও। এই হয়তো ছাদে জামাকাপড় রোদে দিচ্ছেন। পরক্ষণেই নিচের বাগানের মাটি খুঁচিয়ে তাতে নিমখোল ছড়াচ্ছেন। দোতলার বারান্দার মোজেইক মেঝে সাবান দিয়ে ঘষে চকচকে করছেন। খুব ব্যস্ত। সর্বক্ষণ ছুটছেন।
হিমেলীদি আমাদের প্রতিবেশী। পাশেই বেশ বড় দোতলা একটা বাড়ি। আমাদের দোতলার ফ্ল্যাটের উত্তরের জানালা দিয়ে ওদের শোবার ঘরের জানালাটা স্পষ্ট দেখা যায়। আর ওদের বিরাট চওড়া ছড়ানো বারান্দাটা তো আমাদের পুঁচকে ব্যালকনির একদম মুখোমুখি।
সবে মাসখানেক হল এই নতুন ফ্ল্যাটটায় এসেছি আমরা। পাড়াটা একদম ফাঁকা। এখনও পঞ্চসায়রের এইদিকটা বেশ নির্জন। চারপাশে বাড়ি। কিন্তু বড্ড দূরে দূরে। বাড়ির চারপাশে খোলা জায়গা, তাতে নানান গাছপালা। সন্ধেবেলা রাস্তায় আলো না জ্বললে একটা ভূতুড়ে ফীলিং হয়। এই বাড়িগুলোতে লোকজনও খুব কম। অধিকাংশই বয়স্ক মানুষ। অনেকেই বারান্দায় বসে থাকেন চুপচাপ। সকালে বা বিকেলে একটু হাঁটেন রাস্তায়। বিশাল বড় একটা ঝিলের পাশ দিয়ে টানা রাস্তা চলে গিয়েছে। সেই রাস্তাতেও লোক চলাচল নেই বললেই চলে। এখানেই আমার বাবা-মা নির্জন আর খোলামেলা প্রকৃতির মাঝখানে একটু হাত-পা ছড়িয়ে থাকতে চাইলেন। আমিও রাজি হলাম। অথচ এমনই কপাল, ফ্ল্যাট বুকিং করার কয়েকমাসের মধ্যেই বাবার বদলি হয়ে গেল সেই রাজস্থান। ফলে মা আর আমি দু’জনে চলে এলাম এই ফ্ল্যাটে থাকতে।
প্রথম দিনেই পাশের বাড়িটা দেখে আমার অবাক লাগল। কেমন পুরনো ছাঁদের বাড়ি। কী সুন্দর! বড় বড় জানালা। টানা বারান্দা। গ্রিলের জাফরির কী অপূর্ব কারুকাজ। আর বাড়ির মধ্যে থেকে প্রথমদিনেই বেরিয়ে এসে আমাদের সঙ্গে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে আলাপ করে গেল হিমেলীদি।
আমার তো মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হল সবে। পরীক্ষা শেষ হতেই আমরা এই ফ্ল্যাটে চলে এলাম। এই নতুন ফ্ল্যাটের বাকি বাসিন্দারা এখনও সবাই আসেনি পাকাপাকিভাবে। শুনেছি সবাই পয়লা বৈশাখে আসবে। আপাতত এই ফ্ল্যাটবাড়িটার মধ্যে কিছুদিন আমরাই একা।
প্রথম দিনেই জানালা দিয়ে ডেকে হইচই করে আলাপ জমিয়ে নিল হিমেলীদি।
‘নতুন এলে তোমরা?’
‘হ্যাঁ . . . ’
‘খুব ভাল হল . . . এই জায়গাটা কেমন ফাঁকা ছিল। জানলা দিয়ে তাকালে মন খারাপ হত। বারান্দায় তো সন্ধের পরে আসতামই না ভয়ে।’
‘ভয় কেন?’
‘আর বলিস না রে। আমি খুব ভীতু।’
এক মুহূর্তে তুমি থেকে তুইতে চলে গেল হিমেলীদি। জেনে নিল চটপট, আমার ডাক নাম টুকুন।
‘তোমার নাম হিমেলী কেন গো?’
‘মা বলেছিলেন, হেমন্তকালে জন্মেছিলাম তো! তাই . . .’
হিমেলীদি বড় সুন্দর হাসে। হাসলে ওর ডান গালে টোল পড়ে।
‘একা একা থাকো, সেইজন্য ভয় করে তোমার?’
‘আর বলিস না টুকুন . . . কী করব!’
হিমেলীদিকে প্রথমদিনের আলাপে আর কিছু বলতে পারিনি। মা’কেই বললাম রাতে।
‘আচ্ছা মা, ওই দিদি অত বড় দোতলা বাড়িতে একা একা থাকে কেন গো?’
মা চোখ কুঁচকে তাকাল আমার দিকে।
‘আমি তো ঠিক জানি না রে। এর মধ্যেই এত আলাপ জমে গেছে তোর সঙ্গে?’
‘হ্যাঁ গো। ওই জানালা দিয়ে ডাকল আজ দুপুরে।’
‘একদিকে ভালই হয়েছে রে। এই বিল্ডিংয়ে এখনও কেউ আসেনি। নতুন জায়গা। আমি অফিস বেরিয়ে গেলে তোর আর তেমন একা একা লাগবে না।’
বিল্ডিংয়ে একজন দারোয়ান আছে। নামেই কেয়ারটেকার। বাজার দোকানে যায়, খায়-দায়, ঘুমোয়। একতলায় গ্যারাজের পেছনে একটা একচিলতে ঘরে একা থাকে। আমরা থাকতে আসছি শুনে বিল্ডিংয়ের সকলে মিলেই এই কাকুকে ঠিক করে নিয়েছিল। আমি এমনিও একা থাকতে ভয় পাই না। অনেক গল্পের বই পড়ি। প্রচুর গান শুনি। আর মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবার পরে তো দিব্যি ফূর্তিতেই আছি। নতুন পাড়ায় একটাই অবশ্য খুব দুঃখের জায়গা। আমাদের ভবানীপুর পাড়ার পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে হুটোপাটি করা হচ্ছে না। যদিও ফোনে কথা হয়। ওরাও মনখারাপ করে।
২
দুপুরবেলা অফিসে গেছে মা। আমাদের ফ্ল্যাটবাড়ির পাশে অনেক জমি এখনও ফাঁকা। কোনওটাতে ঝোপঝাড়, কোনওটা পাঁচিল ঘেরা। সবই বিক্রি হয়ে গেছে। বেশিদিন ফাঁকা থাকবে না। অনেক পাখির ডাক শোনা যায় এখানে। জানালা দিয়ে দেখি হিমেলীদি দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়, খুব জোরে বকছে কাকে।
‘ও হিমেলীদি, কাকে বকছ তুমি?’
‘আর বলিস না। ওই কাকটাকে দেখ। ওই কার্নিশে গিয়ে বসেছে। কী যে জ্বালায়, তুই ভাবতে পারবি না। সবে রান্নাঘরে ঢুকেছি, অমনি জানালায় এসে বসে ডেকেই যাবে। প্রথমে আস্তে আস্তে ডাকবে। তারপর চেঁচাবে। আচ্ছা আমি কাজেকর্মে থাকি, সবসময় কি হাতের কাজ ফেলে ওকে খেতে দিতে পারি? তার ওপর কত বায়নাক্কা।’
‘আহা রে! অত বোকো না। বিস্কুট দাও, খেয়ে নেবে।’
‘আচ্ছা, টুকুন, কাক দেখলে তোর ভয় করে না?’
‘কাক দেখলে? দূর! ভয় করতে যাবে কেন?’
‘আমার খুব ভয় করে জানিস?’
হিমেলীদি খুব করুণ মুখে তাকায়।
সেদিনই অনেকক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনলাম হিমেলীদির কথা। হিমেলীদির একমাত্র দাদা থাকেন বিদেশে। সেখানেই তাঁর চাকরি, তাঁর সংসার। হয়তো আর ফিরবেন না কোনওদিন। বাবা-মা দুজনেই গত হয়েছেন একে একে। এই বাড়িটা দাদা বিক্রি করে হিমেলীদিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন বিদেশে, হিমেলীদি কিছুতেই দাদার সঙ্গে যায়নি। তখন তেমন কিছু মনে হয়নি। কিন্তু এখন ভয় তাঁকে জড়িয়ে থাকে সর্বক্ষণ। কাকের ডাকে ভয়, কুকুর কাঁদলে ভয়, হুলো বেড়াল দেখলে ভয়, রাত্তিরে কলাগাছের পাতায় জ্যোৎস্নার আলো পড়লে ভয়। নিজেও বোঝে, এগুলো বড্ড বোকামি। তবুও নিজের যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে সব এড়াতে পারে না।
‘কাল কী হয়েছিল জানিস?’
‘কী হয়েছিল হিমেলীদি?’
‘আর বলিস না। রাত্তিরে তো একটা আলো জ্বালিয়েই ঘুমোই আমি। ভয় পাই বলে। হঠাৎ মাঝরাতে মনে হল, কে যেন হাঁটছে ঘরের মধ্যে।’
‘ওরে বাবা!’
‘হ্যাঁ রে . . . শুনি খুট খুট করে শব্দ হচ্ছে।’
‘নির্ঘাত ইঁদুর।’
‘কাছাকাছি গেছিস। ইঁদুর নয়, ছুঁচো। খাবার টেবিলে ফল রাখা থাকে। খেতে এসেছিল।’
আমি হেসে ফেলি।
‘সবই জানো, তো ভয় পাও কেন?’
‘উফ! কে জানে কেন?’
‘তাহলে একা একা থাকোই বা কেন? ভয় তো করবেই।’
হিমেলীদি হেসে ফেলে।
‘এটা ভাল বলেছিস। কেউ কি ইচ্ছে করে একা থাকে নাকি রে? এই যে তুইও কেমন একা আছিস।’
‘আমার খুব একটা অসুবিধে হচ্ছে না। মাসখানেক পরে রেজাল্ট বেরিয়ে যাবে। আবার নতুন স্কুল, নতুন ক্লাস। এই বিল্ডিংয়েও শুনছি লোকজন চলে আসবে সব। মাত্র ক’দিনের ব্যাপার।’
‘আমিও এই ভেবেই কতদিন কাটিয়ে দিলাম বল। তেমন পড়াশুনাও করিনি যে চাকরি-বাকরি করব। দাদা অনেকবার বলেছিল ওর সঙ্গে যেতে, আমার ইচ্ছে করল না। আমাদের নিচের তলায় একজন ভাড়াটে ছিল। ওদেরও দাদা-বৌদি বলতাম। ওরা কয়েকমাস হল চলে গেছে নিজেদের বাড়ি করে। যতদিন না নতুন ভাড়াটে আসছে, এইভাবেই আছি। ভাগ্যিস তোরা এলি। দুপুরে আগে বেশ ভয় করত। ঝিলের জলে বুজকুড়ি কাটত, আর দেখে ভাবতাম, এই বুঝি কেউ ফস করে উঠল মাথা বাড়িয়ে।’
হিমেলীদির কথা শুনে আমারই কেমন গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল।
‘ওইদিকের একসার নারকেল গাছ দেখছিস না’, হিমেলীদির কথায় তাকাই পশ্চিমদিকের জানালায়, ‘ওই নারকেল গাছের মাথার ওপর থালার মতো চাঁদ উঠলেই আমার গা ছমছম করে। মনে হয় কারা যেন হাত বাড়িয়ে ডাকছে, আয় আয়। কিন্তু আমায় পাহারা দেয় ওই ঝাঁকড়া নিম গাছটা। ওর দিকে তাকালেই ও বলে, ভয় কীসের, আমি তো আছি। ওই গাছটা আমার মায়ের হাতে লাগানো তো। ও একদম মায়েরই মতো।’
দুপুরে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আজগুবি গল্প শুনে বেশ অস্বস্তি হচ্ছিল।
‘আমি ঘরে যাই গো। মোবাইলে চার্জ নেই একদম।’
একটু এড়িয়েই ঘরে চলে আসি।
৩
কী এক মারণ রোগের অত্যাচারে চারদিক একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে গেল। বাবা আটকে পড়লেন রাজস্থানে। আসতে পারছেন না। মায়ের ওয়ার্ক ফ্রম হোম শুরু হয়ে গেল। ইতিমধ্যে একদিন কেয়ারটেকার কাকু দেশে গিয়েছিল। লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় সে’ও আর ফিরতে পারল না দেশ থেকে। মা আর আমি ফ্ল্যাটে। হিমেলীদি নিজের বাড়ির দোতলায়। তাঁর নতুন ভাড়াটেরাও আসতে পারেনি। আমাদের বিল্ডিংও খাঁ খাঁ করছে। অদ্ভুত পরিস্থিতি।
এর মধ্যেই একদিন হিমেলীদি বারান্দার কোণায় দাঁড়িয়ে উদাস মুখে চেয়েছিল পশ্চিমের আকাশের দিকে। ওই নারকেল গাছের পাতাগুলোর দিকে। যারা ওকে কেবল ডাকে বলে ওর মনে হয়। আগের দিনই বলছিল, ভিডিও কলে কথা হয়েছে ওর দাদার সঙ্গে। ওদের দেশেও মারণরোগে বিপর্যস্ত সকলে। কবে যে কী স্বাভাবিক হবে কে জানে!
আমারও খুব মন খারাপ। চারপাশটা আরও থমথম করে আজকাল। দুপুরবেলা মা একটা ঘরে কম্পিউটার নিয়ে মিটিং করছে। কানে হেডফোন। দরজাটা ভেজানো।
আজ দু’দিন ধরে হিমেলীদিকে দেখতে পাইনি জানালায়। বারান্দার দরজা খোলা। জানালাও খোলা। রাতে আলো জ্বলে। কিন্তু জানালায় বা বারান্দায় দেখিনি। আজ বসে ছবি আঁকছিলাম। ওই ঝিলের ধারে সারবাঁধা নারকেল গাছগুলোর ছবি। শেষ সূর্যের কমলা গেরুয়া মেশানো আলো কেমন লুটিয়ে পড়েছে ওদের মাথার ওপর। জলরঙে আঁকতে আঁকতেই বাথরুমের বেসিনে গেছি বাটির জল বদলাতে। শানবাঁধানো মেঝেতে জল ছিল বোধহয়। অসাবধানে পা পিছলে খুব জোর হোঁচট। মাথার পিছনদিকটা খুব জোরে ঠুকে গিয়েছিল মেঝেতে। তারপর আমার আর কিচ্ছু মনে নেই।
আবছা অচেতন অবস্থায় দেখলাম হিমেলীদি ঝুঁকে পড়েছে আমার মুখের ওপর। ওর কোঁকড়ানো চুলেও বিন্দু বিন্দু জল।
‘ওঠ ওঠ শিগগিরি। কিচ্ছু হয়নি তোর। ওঠ বলছি। উঠে দাঁড়া।’
আমি কথা বলতেই পারছি না। তাকিয়ে দেখছি হিমেলীদির কপাল ফুলে উঠেছে। একটা কাটা দাগ। রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে গালে, চিবুকে। চুপ করে তাকিয়ে আছি শুধু।
‘আরে, ভয় পাচ্ছিস কেন? আস্তে আস্তে উঠে বোস, ঠিক পারবি দেখ। পারতেই হবে!’
আমি আধবোজা চোখেই দেখি ভেজা নরম হাতটা কপালে রাখছে হিমেলীদি। আঃ! কী ঠান্ডা। কী আরাম!
ঘোর কেটে গেল একটা ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জের খোঁচায়। চোখ দু’টো ভাল করে মেলে দেখি, মুখে মাস্ক পরা একজন ভদ্রলোক পাশে বসে আছেন। পায়ের কাছে মা দাঁড়ানো। উদ্বিগ্ন মুখ।
‘উফ! ডাক্তারবাবু, কী ভাগ্যিস আপনাকে পেলাম।’
‘আরে আমি এই পাড়াতেই থাকি। তিনটে বাড়ি পরে। আপনি বোধহয় নতুন এসেছেন। চিনবেন না আমাকে। আমাকে ফোন করল একজন। একটি মেয়ের গলা। এই বাড়ির কথা বলল। শিগগির আসার জন্য সে কী কাকুতিমিনতি। কী মনে হল, বুঝতেই পারছেন, এই করোনার ভয়ে যতই বাড়িতে বসে থাকি, ডাক্তারি তো আমার পেশা। পাড়ার কেউ ডাকলে চট করে না বলা যায়? আর ভাগ্যিস আপনার পাশের বাড়িতেই এসেছিলাম কাল . . . ’
‘আচ্ছা ডাক্তারবাবু, কে ডাকল আপনাকে? আমরা তো কেউ . . . আমি জানেন টেরই পাইনি টুকুন বাথরুমে পড়ে গিয়ে এত চোট পেয়েছে . . . আপনি কলিংবেল বাজালেন, আমি টুকুনকে ডাকছি, ও সাড়া দিচ্ছে না দেখে এসে দেখি এই কাণ্ড। তখন দরজা খুলে আপনাকে পাওয়া . . . । ভগবান জুটিয়ে দিলেন। এই লকডাউনের মধ্যে কী যে হত . . . উফ। আমি ভাবতে পারছি না।’
মা’কে ক্ষীণ গলায় বলি, ‘মা, হিমেলীদি এসেছিল?’
‘হিমেলী? ও মা! সে কী করে আসবে? পরশু রাতে বাথরুমে পড়ে গিয়ে সে’ও তো শয্যাশায়ী। মাথা ফেটে গেছে। কপালে স্টিচ পড়েছে। আমরা কিচ্ছু টের পাইনি। ওর দাদা ওকে সমানে ফোন করে করে কিছুতেই না পেয়ে ওদের পুরনো ভাড়াটের কাছে ফোন করে। তাঁরা এই ডাক্তারবাবুকে চিনতেন। ওরাই ওনাকে ফোন করে হিমেলীর খোঁজ নিতে বলে। ভাগ্যিস ওর নিচের দরজা খোলা ছিল। না হলে ওই ভারী সেগুনকাঠের সদর দরজা ভেঙে ঢুকতে হত। এই ডাক্তারবাবুই বাড়িতে আজ এসে আমাদের সব বললেন। উনি কাল এসে ওকে ঘুমের ওষুধ আর ইঞ্জেকশন দিয়ে গেছেন। কোমরেও চোট লেগেছে বেচারার। বিছানায় শুয়ে আছে। ওনার স্ত্রী খিচুড়ি বানিয়ে পাঠিয়েছেন। খেয়েদেয়ে ও এখন ঘুমোচ্ছে।’
বুকের ভেতর শিরশির করে উঠল।
তাহলে যে হিমেলীদিকে স্পষ্ট দেখলাম আমার পাশে। চোখের ভুল? আমার জন্য ডাক্তারবাবুকেই বা কে খবর দিল?
জানালা দিয়ে দেখি নিমগাছের পাতাগুলো ঝিরঝির করে কাঁপছে হাওয়ায়।