Categories
গল্পগ্রাম |

হিয়ার আকাশ

552 |
Share
| ১৭ অক্টোবর, ২০২০
সৌমেন পাল

অলংকরণ: লেখক

স্কুল থেকে ফিরে সেই যে খেলতে গেছে, হিয়ার কোনও পাত্তাই নেই। সন্ধে হতে চলল, ফেরার নামগন্ধ নেই মেয়ের। এদিকে রাগ চড়ছে ঝিনুকের। বারবার ঘড়ি দেখছে। হিন্দোলের ফিরতে দেরি হবে। ভেবেছিল মেয়েকে আরতির জিম্মায় রেখে দিদির বাড়ি ঘুরে আসবে। বিরাটি থেকে নাগের বাজার কতটুকু আর! তবু ইদানীং সংসারের চাপে যাওয়াই হয় না। কাল রোববার। হিন্দোল বলেছে, পুজোর কেনাকাটা যতটা সম্ভব কালকেই সেরে ফেলবে। আর সময় পাবে না। পুজোর মেরে-কেটে আর একমাস বাকি। দিদির ছেলের জন্যও জামাপ্যান্ট কিনতে হবে। টোবোল হাতে-পায়ে যা লম্বা হচ্ছে! গতবছর মাপে ছোট হওয়ায় আবার গড়িয়াহাট গিয়ে পালটাতে হয়েছে। ঝিনুক ঠিক করেছে, এবার টোবোলের একখানা জামাপ্যান্ট চেয়ে আনবে। সেই কারণেই যাওয়া। আবার ঘড়ি দেখল ঝিনুক। ছ’টা বাজে। সাতটায় টিউটর আসবেন। বইপত্র গুছিয়ে, মেয়ের হরলিক্স হিন্দোলের জলখাবার আরতিকে বুঝিয়ে দিয়ে তবে রওনা দেবে। নইলে ফিরতে রাত হয়ে যাবে। হিন্দোল বলেছিল, এবারেও গড়িয়াহাট থেকে সেরে নিতে। ঝিনুকের আবদারে স্থির হয়েছে নিউমার্কেট। কলিংবেলের শব্দে দরজা খুলতেই ঝিনুক দেখে, হিয়া আর বিন্তিকে নিয়ে আরতি হাজির।

‘কীরে, ক’টা বাজে খেয়াল আছে? পইপই করে বললাম তাড়াতাড়ি ফিরবি! একটু বাদে আন্টি আসবে! হোমটাস্কগুলো কে করবে,আমি? সারাদিন মাঠেই পড়ে থাকো’। দরজায় দাঁড়িয়েই মেয়েকে ধমকাল ঝিনুক।
‘ওকে বোকো না বউদি! বেচারি এমনিতেই কাঁচুমাচু হয়ে আছে! খেলতে খেলতে পড়ে গিয়ে কাদা মেখেছে। বিন্তি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধুয়ে দিয়েছে। . . . তাই দেরি’। সাফাই দিল আরতি।

বিন্তি আরতির মেয়ে। হিয়ার সমবয়সী। দু’জনের হলায়-গলায় দোস্তি। বিন্তির যখন একবছর, বাবা তখন থেকেই বেপাত্তা। আরতি পাশের কলোনিতে ঘরভাড়া থাকে। পেটের দায়ে দু-তিন বাড়িতে ঠিকা কাজ করে মানুষ করছে মেয়েটাকে। ঝিনুকদের বাড়িতে অনেক বছর হয়ে গেল ওর। খুব বিশ্বাসী। বাড়তি অনেক কাজ করে দেয়। ঝিনুকও বাড়তি টাকা, এটা সেটা দিয়ে সাহায্য করে। বিন্তিকে কাছের প্রাইমারি স্কুলটায় ভর্তি করিয়েছে। বইপত্র, ইউনিফর্ম যখন যা দরকার যোগান দেয়।

বিকেলে দুই বন্ধু একসঙ্গে মাঠে খেলে। আগে হিয়াকে আটকে রাখত ঝিনুক। একা একা কি খেলা যায়? বেচারি হিয়া ছাদে ওর পোষা বেড়াল টুনুকে নিয়ে চুপ করে বসে থাকত আর কাঁদত। শেষমেশ হিন্দোল অনেক বুঝিয়ে নিমরাজি করিয়েছে ঝিনুককে। তাছাড়া বিন্তিও খেলে, এই ভরসায় বেড়ি আলগা হয়েছে। দঙ্গলে পড়ে হিয়া যেমন মিশুকে হয়েছে, তেমনি ছটফটে! তবে মনটা খুব নরম। ঠিক ওর বাবার মতো।

আরতির কথায় একটু নরম হল ঝিনুক, ‘কই দেখি, লাগেনি তো?’
‘ন্ . . . না মা!’ ভয়ে ভয়ে উত্তর দিল হিয়া।
‘যা, হাতমুখ ধুয়ে জামা পালটে পড়তে বোস। আর শোন, আমি বেরচ্ছি। ফিরতে দেরি হবে। যতক্ষণ বাপি না ফেরে, আরতিপিসির কাছে লক্ষ্মী হয়ে থাকবি। কেমন?’ ব’লে দ্রুত তৈরি হয়ে বেরিয়ে গেল ঝিনুক।

এদিকে হিয়ার সবুর সইছে না। সকাল থেকেই তাড়া লাগাচ্ছে বাবাকে। ঝিনুক কেনাকাটার লিস্ট বানাতে বসেছে, পাছে কোনওটা বাদ পড়ে যায়।

‘হ্যাঁ, যত পার লম্বা করো! দেখ কেউ বাদ পড়ল কি না!’ ঠাট্টা হিন্দোলের . . .

‘সেই তো। পরে তুমিই বলবে, ইস্ অমুকের কেনা হল না! তমুকেরটা বাদ পড়ে গেল! তখন দোষ হবে আমার!’ ঝিনুক পালটা দিতেই হিন্দোল চুপ। জানে, বউ এ ব্যাপারটা ভাল সামলায়। সে খালি টাকা দিয়েই খালাস। হিয়ারই তো পাঁচ-ছটা কিনতে হবে। বাড়িরগুলো ছাড়াও আত্মীয়রা অনেকেই টাকা ধরে দেয়। ব’লে, পছন্দ মতো কিনে নিতে।

নিউমার্কেটে ঘুরে হিয়ারগুলোই আগে কেনা হল। অষ্টমীর জন্য দারুণ একখানা লঙস্কার্ট কিনল ঝিনুক। ওটাই সবচেয়ে দামি। হিয়াকে বেশ মানাবে। এদিকে মেয়ে বায়না ধরেছে, ওইরকমই একখানা বিন্তির জন্যেও কিনতে হবে। মহা ঝামেলা! ঝিনুক বলল, ‘বিন্তির জন্যেও ভাল জামা কিনব।’
‘তা কেন? আমার তো পুজোয় অনেকগুলো হয়। ওর একটাও ভাল জামা নেই! ওকেও সেম জামা দাও!’ গোঁ ধরল হিয়া।
শেষমেশ হিন্দোল বোঝাল, ‘একরকম জামা দুটো হয় না বোকা!’ তবে মেয়ে মানল।
ট্যাক্সিতে ফেরার পথে হিন্দোলকে আনমনা দেখে ঝিনুক বলল, ‘কী ভাবছ? বাজেট ক্রস করে গেল?’
‘ওসব না। ভাবছি শিশুরা কত সরল! আপন-পর ভেদ নেই! অথচ মানুষ শরীরে যত বড় হয়, ততই ছোট হতে থাকে মন!’
‘কই তোমার তো হয়নি? হিয়া তোমারই ধাঁচের। তবে যাই বল, বাচ্চাদের জামাকাপড়ের দাম যা বেড়েছে, খুব গায়ে লাগে! অথচ বছর ঘুরতেই আঁট হয়।’
‘কাউকে দিয়ে দিলেই তো পার! ব্যবহার করতে পারবে।’
‘দিই তো। বিন্তি হিয়ারগুলোই তো পরে! পুজোর সময় ঢাকিদেরও দিই।’

মৃদু হেসে জানলায় চোখ রাখল হিন্দোল। পুজোর আগমনী সাজে আস্তে আস্তে সেজে উঠছে শহরটা। পালটে যাচ্ছে রঙরূপ।

সেদিন স্কুল থেকে ফিরে হিয়া বলল, ‘জানো মা, আমাদের ক্লাসের মেহুল বলেছে, ওদের ছোট্ট লোমওলা ডগিটার জন্যও ওর বাবা পুজোয় নতুন জামা কিনেছে! টুনুকে সে কথা বলতে ও বলল, ওরও একখানা জামা চাই! মা, টুনুকেও জামা কিনে দাও না?’
ঝিনুক হেসে উঠল, ‘বাব্বা, তোর পুষ্যিটাও বায়না করে বুঝি!’
‘করেই তো! সেদিন দুপুরবেলা শুয়ে আছি। টুনু তাকের উপর বসে। খালি বায়না, “হিয়া দিদি, আমাকে একহাতা দুধ দিবি?” বললাম, একটু আগেই তো মাছ-ভাত খেলি! আবার খিদে পেয়ে গেল? বলে, “না, একটু লোভ হচ্ছে। আমি বললাম, মা জানতে পারলে পিটবে।” টুনুটা এত বদমাশ! বলে কী, “চুপিচুপি আনবি। তারপর জল মিশিয়ে দিবি। মা বুঝতেই পারবে না।”’
‘তারপর? তুই দিলি?’ খুব মজা পেয়েছে ঝিনুক।
‘উঁহু। আমি বললাম, “নো চিটিং টুনু! এ জন্যই কেউ তোকে স্কুলে ভর্তি নেয় না!” মা, দেবে টুনুকে জামা কিনে?’
‘আচ্ছা, আমি কাপড় কেটে বানিয়ে দেব। হয়েছে?’ মেয়ের সারল্যে ঝিনুক অবাক। অথচ ওর বয়সী অন্য বাচ্চারা বেশ পাকা।

হিয়া খুব খুশি। বলল, ‘মা, সেদিন বোদুকাকু ওর মেয়ের জন্য পুরনো জামা চাইল, কই দিলে না তো?’
‘বোদুকাকুটা আবার কে?’ মনে পড়ছে না ঝিনুকের।
‘আমাদের স্কুলের দারোয়ানকাকু গো! সেদিন তুমি আনতে গেলে! বোদুকাকু বলল! মনে নেই?’
‘ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে। ভুলেই গেছিলাম! আচ্ছা দিয়ে দেব।’ দায়সারা গোছের জবাব দিল ঝিনুক।


পুজো চলে এল। হিয়াদের নামি স্কুলে নিয়মের কড়াকড়ি খুব। তবে চতুর্থীর দিন ছুটি পড়বে। ওদিন যে যার পছন্দের পোশাকে যেতে পারে। ঝিনুক ভাবল, হিয়াকে ওর গত জন্মদিনের ফ্রিল দেওয়া সাদা ফ্রকটা পরাবে। খুব সুন্দর দেখায়। কিন্তু ওয়াড্রোব তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ফ্রকটা পেল না। সব ওলটপালট করে দেখল। কোত্থাও নেই। এদিকে স্কুলের দেরি হয়ে যাচ্ছে। অন্য একটা জামা পরিয়ে মেয়েকে রওনা করে, আবার খুঁজতে বসল সে।

‘কী খুঁজছ অত? গুপ্তধন বুঝি?’ রসিকতা হিন্দোলের . . .
এমনিতেই মেজাজ খারাপ ঝিনুকের। তায় আগুনে ঘি পড়ল। ‘তোমার আর কী? মেয়েকে কাঁড়ি কাঁড়ি দামি জামা কিনে দিচ্ছ! কোনটা কোথায় বেপাত্তা হয়ে যাচ্ছে, খেয়াল রাখ? সব আমার দায় . . . ’
‘আহা, কী হয়েছে বলবে তো?’

ঝিনুকের কাঁদো কাঁদো মুখ . . .‘হিয়ার জন্মদিনের সাদা ফ্রকটা খুঁজে পাচ্ছি না। সেদিনও অলকদার বিয়েতে পরে গেল। একদম নতুন।’
‘কাউকে দাওনি তো? বা লন্ড্রিতে . . .’
‘মেয়ের জামাকাপড় লন্ড্রিতে দিই কখনও? আরতিই কেচে দেয়। আমার স্পষ্ট মনে আছে, ওর ওয়াড্রোবেই রেখেছিলাম। আগেও দু-একবার এমন হয়েছে জানো? বলিনি তোমাকে। এত্ত জামা ওর, থই পাই না। গোছাতে গিয়ে হঠাৎ খেয়াল পড়লে দেখি অমুক জামাটা নেই! পুরো গায়েব . . .!’
‘জামার তো পা গজায়নি যে হেঁটে হেঁটে চলে যাবে! দেখ বাড়িতেই কোথাও . . . আরতিকে জিজ্ঞেস করো না?’
‘ছি ছি! হাতে করে না দিলে ও আজ পর্যন্ত একটা জিনিসও নেয়নি। গরিব হতে পারে, কিন্তু প্রখর আত্মসম্মানবোধ!’
‘তুমি ভুল বুঝলে। সে কথা বলিনি। বললাম, জিজ্ঞেস করো, ও যদি মনে করতে পারে।’ ব’লে, স্নানে গেল হিন্দোল।

চেষ্টা করেও হারানো জামাটার শোক ভুলতে পারল না ঝিনুক। তবে পুজোর ডামাডোলে ব্যাপারখানা চাপা পড়ে গেল।

পঞ্চমী থেকেই পাড়া সরগরম। প্রতিমা চলে এসেছে। বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা। হিন্দোল ঝিনুক দু’জনেই পাড়ার পুজোয় ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। এ ক’দিন মণ্ডপেই কেটে যায়।

পুজো কমিটির উদ্যোগে প্রতিবছর অষ্টমীর দিন পথশিশু, অনাথ বাচ্চাদের বস্ত্র বিতরণ আর ভোগ খাওয়ানো হয়। এবারে ঠিক হয়েছে শহরের নিম্নবিত্ত, গরিব পরিবারের বাচ্চাদের ডাকা হবে। তাও প্রায় শ-তিনেক। ওদিন ব্যস্ততা একেবারে তুঙ্গে। সকাল থেকে দম ফেলার সময় নেই ঝিনুকের। অষ্টমীর পুজোর সময় হয়ে আসছে। কোনওমতে হিয়াকে স্নান করিয়ে নিজেও তৈরি হয়ে নিল। অষ্টমীর জন্য কেনা লঙস্কার্টটা মেয়েকে দিয়ে বলল, ‘এটা পরে তৈরি হয়ে বাবার সাথে আয়। অঞ্জলি দিতে হবে। দেরি করিস না।’ তড়িঘড়ি বেরিয়ে গেল সে।

অঞ্জলি দেওয়া চলছে। মেয়েকে দেখতে না পেয়ে ঝিনুক হিন্দোলকে জিজ্ঞেস করতে জানল, হিয়া বিন্তির সাথে আসবে।

‘ওই তো আরতি আসছে . . .’ ইশারা করল হিন্দোল।
‘কিরে, মেয়েদুটো কই?’ আরতিকে জিজ্ঞেস করল ঝিনুক।
‘আমাদের বাড়িতে। এখুনি আসছে। হিয়াকে ওই জামাটায় কী মানিয়েছে গো বউদি!’ বলে আরতি অঞ্জলি দিতে এগিয়ে গেল।

এর মধ্যেই ঝিনুক দেখল, হিয়া আর বিন্তি এদিকেই আসছে। কিন্তু একি! হিয়ার লঙস্কার্ট বিন্তি পরেছে কেন! আর বিন্তিরটা হিয়া! মাথায় রক্ত চড়ে গেল। মনে হল, এখুনি চড় কষায় মেয়েকে। মা’র মুখ দেখে হাসি মিলিয়ে গেল হিয়ার।

বিন্তি কাঁচুমাচু হয়ে বলল, ‘আমি কিছুতেই পরতে চাইনি। ও-ই জোর করল। ওকে বোকো না জেঠি। আমি এখনই খুলে দিচ্ছি।’
হিন্দোল বাধা দিল, ‘না বিন্তি, আগে অঞ্জলি দাও। হিয়া তো ঠিকই করেছে। বন্ধুর সঙ্গে সবসময় ভাল জিনিস শেয়ার করতে হয়।’
ঝিনুককে ইশারায় শান্ত করল হিন্দোল। ওরা অঞ্জলি দিতে গেলে বোঝাল, ‘বুঝতে পারছি তোমার কষ্টটা। মেয়ের জন্য পছন্দ করে কিনেছিলে। কিন্তু ভাব তো, ওর কত বড় মন! হিয়া যাতে খুশি থাকে, আনন্দ পায়, তাই করুক। আজকের দিনে প্লিজ বোকো না।’

মেয়ের ওপর রাগ করেও হেসে ফেলল ঝিনুক, ‘তুমি কী ভাব, আমি পাষাণ? আমিও তো মা! তবু আজকে ওই জামাটায় দেখতে চেয়েছিলাম।’ চোখ ছলছলে ঝিনুকের . . .

বস্ত্র বিতরণ শুরু হবে। মণ্ডপের ডানদিকে মঞ্চ। দুঃস্থ ছেলেমেয়েরা সার বেঁধে দাঁড়িয়েছে। হিন্দোল অন্যদের সঙ্গে তদারকিতে ব্যস্ত। ঝিনুক একটু ফুরসত পেয়ে চেয়ার টেনে বসল। হঠাৎ চোখ পড়ল একটা বাচ্চা মেয়ের দিকে। গায়ের জামাটা খুব চেনা চেনা লাগছে না! ঝিনুক মনে করার চেষ্টা করল। হ্যাঁ, ঠিক হিয়ার জন্মদিনের ফ্রকটার মতো! সাদা, ফ্রিল দেওয়া! যেটা তন্ন তন্ন করেও সেদিন খুঁজে পায়নি! এত দামি জামা মেয়েটার গায়ে! সন্দেহবশত কাছে যেতেই দেখে, ভিড়ের মধ্যে হিয়াদের স্কুলের দারোয়ান বোদুকাকু। সে ওই মেয়েটিকেই হাত নেড়ে কিছু বলছে। বুঝতে আর কিছু বাকি রইল না ঝিনুকের। হতভম্ব হয়ে গেল। কিন্তু কই, মেয়ের উপর তো একটুও রাগ হচ্ছে না! বরং গর্ব হচ্ছে! অজান্তেই চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এল। গড়িয়ে পড়ল মুক্তোদানা। বুকের ভেতর টলটলে এক আনন্দের অনুভূতি। এত মায়া ওইটুকু মেয়ের মধ্যে! মনে মনে প্রার্থনা করল দশভূজার কাছে, ‘আশীর্বাদ করো মা। হিয়া যেন এমনটাই থাকে।’

চোখ মুছে ভিড়ের মধ্যে খুঁজতে লাগল মেয়েকে। এদিকে হিয়া ঠিক খেয়াল করেছে ব্যাপারখানা। বিপদ বুঝে ততক্ষণে ভয়ে সরে পড়েছে। খুঁজতে খুঁজতে ঝিনুক দেখল, বিরাট দুর্গা প্রতিমার আড়ালে অপরাধী মুখ করে লুকিয়ে আছে হিয়া। দূর থেকে তাকেই লক্ষ্য করছে। মৃন্ময়ী মূর্তির পাশে ঠিক যেন তার ছোট্ট চিন্ময়ী!

ঢাকের বাদ্যি, কাঁসর, আরতি, হইচই সবকিছু ছাড়িয়ে ঝিনুক চোখ রাখল শরতের নীলে। গভীর একখানা শ্বাস নিল। মনে হল, হিয়া যেন পেঁজা তুলোর মতো খেলে বেড়াচ্ছে তার বুকের মাঝখানে।