সেই যে পুটুস কড়াইয়ে অনেকটা তেল ঢেলে তার মধ্যে বেগুন চুবিয়ে দিয়েছিল আর সেটা দেখে ফেলে ওর মা ওকে জিজ্ঞেস করেছিল, ও ওখানে কী করছে . . . তার পরের কথা তো তখন আর হয়নি; তা তখন মা’র গলার আওয়াজ শুনে ঠাম্মু আর দাদাইও হাজির।
পুটুস ভয়ে ভয়ে বলল, জ্বলল না তো?
মা বলল, কী বলছিস? মা’র গলা এখনও রাগ রাগ।
দাদাই হঠাৎ হো হো করে হেসে উঠল। বলল, তিতলি, বুঝলি না, মহারানি হাতে-কলমে দেখতে চাইছিল তেলে বেগুনে কেমন জ্বলে।
শুনে মাও ফিক করে হেসে ফেলল আর পুটুস একদম মায়ের কোল ঘেঁষে দাঁড়াল। বলল, জ্বলল না তো।
ঠাম্মু বলল, তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠা একটা কথা সোনা, যার মানে খুব রেগে যাওয়া। তুই আর একটু বড় হয়ে যখন উঁচু ক্লাসে পড়বি, তখন এগুলো ভাল করে বুঝতে পারবি।
পুটুস বলল, তেলে বেগুনে কী করে জ্বলে?
মা বলল, আচ্ছা, যখন বেগুন ভাজব, তখন তোকে দেখিয়ে দেব। তাহলে তুই ব্যাপারটা বুঝতে পারবি।
দাদাই বলল, মহারানি, চল, আমরা আবার পড়তে বসি।
পুটুস দাদাইয়ের সাথে যেতে যেতে বলল, তেলে বেগুন দিলে যদি নাই জ্বলে, তা’হলে ওটা কীরকম কথা?
দাদাই বলল, মহারানি, এরকম অনেক কথা আছে, যেগুলোর আসল মানে অন্য। শুনে যেটা মনে হল, সেটা নয়। এই পৃথিবীটা তো অনেক বড়, নানা ভাষার মানুষ থাকে এখানে। সব ভাষাতেই এরকম কথা আছে। আমাদের বাংলা ভাষায় এগুলোকে বলে, বাগধারা, প্রবাদ। ইংরাজীতে বলে Idiom।
পুটুসের গল্প এখানেই থাক। আমরা ফিরে যাই আমাদের ‘কথার মধ্যে কথা’য়।
৪
একটা তুলনামূলক কম শোনা Idiom হচ্ছে, ‘Albatross around the neck’। এটা প্রয়োগ করা হয় এমন কোনও ভুল বোঝাতে যেটা আর পিছন ছাড়ে না, বরং, সমস্ত সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
Albatross হল একজাতীয় বড় পাখি, যাদের সমুদ্রের ওপর দিয়ে উড়তে দেখা যায়। নাবিকরা বিশ্বাস করে যে এই পাখি মারলে দুর্ভাগ্য পিছু ধাওয়া করে। ১৭৯৮ সালে লেখা Samuel Taylor Coleridge-এর বিখ্যাত কবিতা ‘The Rime of the Ancient Mariner’ মনে আছে তো? যেখানে এক নাবিক একটা Albatross-কে মেরেছিল। আর তারপরেই যেন অভিশাপ নেমে আসে জাহাজটার ওপর। হাওয়া পড়ে যায়, খাওয়ার জল ফুরিয়ে যায়। ওই নাবিকের সহকর্মীরা তখন রেগে ওর ভুলের বোঝা সেই Albatross-টাকে ওর গলায় ঝুলিয়ে দেয়।
‘Albatross around the neck’ এর উদাহরণ— ‘His blunder of adopting unfair means in the examination three years ago has become an albatross around his neck. His teachers and class mates still remind him of that.’
বাংলায় বলে ‘ভুলের বোঝা বয়ে বেড়ানো’। যেমন, ‘কী যে মতিভ্রম হয়েছিল ওর সেবার পরীক্ষার সময় যে ও নকল করতে গেছিল। এখনও ও সেই ভুলের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে। সুযোগ পেলেই ওর শিক্ষক আর সহপাঠীরা ওকে টুকলিবাজ বলে’।
৫
কম শোনা যায় এরকম আরেকটা Idiom হল ‘Apple pie order’। মানে, ঠিকঠাক সাজিয়ে রাখা। এই Idiomটা নিয়ে দুটো গল্প আছে। একদল বলেন, এটা আসলে ফরাসি কথা ‘nappe pile’, যার মানে ভাঁজকরা লিনেন, তার অপভ্রংশ।
তবে, বেশিরভাগ মানুষেরই বিশ্বাস যে ইংল্যান্ডে থাকা এক আমেরিকান মহিলা প্রতি রবিবার পরের সাত দিনের জন্য আপেলকে সেঁকে একরকমের খাবার বানাতেন। সেগুলোকে রাখার কায়দাটা ছিল তার অদ্ভুত। সোমবার যেটা খাবেন, সেটা থাকত নিচের তাকের একদম ডানদিকে, মঙ্গলবারেরটা ঠিক তার উপরের তাকের ডানদিকে, তার পরের দিনগুলোর জন্যও রাখতেন ঠিক একই ভাবে। জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখার ব্যাপারে ভদ্রমহিলা ছিলেন এরকমই খুঁতখুঁতে। এই গল্পটাই বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। কারণ, খাবার হিসাবে apple pie আমেরিকানদের মধ্যে অনেক বেশি চলে।
তবে, এর উৎপত্তি নিয়ে সুনিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না।
যাই হোক, ১৭৮০ সালে Sir Thomas Pasley-এর লেখায়, ১৮৩৯ সালে প্রকাশিত John Lockhartএর Sir Walter Scottএর স্মৃতিচারণে এই Idiomটির উল্লেখ আছে। উদাহরণ— ‘Why have you made the study-table a mess? Please arrange everything in apple pie order.’
বাংলায় একে বলে, ‘যেখানের জিনিস সেখানে রাখা’। যেমন, ‘হিঁয়াকা মাল হুঁয়া কর না বাবা, যেখানের জিনিস সেখানে রাখ’।
৬
‘American dream’ Idiomটি ব্যবহার করা হয় সাফল্যের জীবন বুঝাতে।
James Truslow Adams-এর ‘Epic of America’ বইয়ে এর প্রথম প্রয়োগ দেখা যায়। বইটির রচনাকাল ১৯৩১ সাল। তিনি লিখেছেন, American Dream হচ্ছে সেই স্বপ্নের দেশ, যেখানে প্রত্যেকের জীবন আরও উন্নত, আরও সমৃদ্ধ, আরও পরিপূর্ণ। তবে, অবশ্যই এটা তার ক্ষমতাসাপেক্ষ বা এটা তাকে অর্জন করতে হয়। উদাহরণ— ‘Do you think that you will sit crossing your legs and have every luxury? American dream is not so easy to achieve.’
বাংলায় বলতে পারি, ‘স্বপ্নের দেশ’। যেমন, ‘তুমি কি ভেবেছ, ঠ্যাঙের ওপর ঠ্যাঙ তুলে থাকলেই সব পেয়ে যাবে? এটা কি স্বপ্নের দেশ নাকি? সেখানে যেতে গেলেও মুরোদ লাগে, বুঝেছ?’
কথায় যেমন বলে, অধিকন্তু ন দোষায়, তেমনই বলে, লেবু বেশী কচলালে তেতো হয়ে যায়। তাই, আজ আর নয়। পরে সময় সুযোগ পেলে আবার লেবু কচলানো যাবে।