Categories
রকমারিনগর |

গ্রাফোলজির সহজপাঠ । ২

517 |
Share
| ২০ অক্টোবর, ২০২০
সময়িতা বন্দ্যোপাধ্যায়

গ্রাফোলজিস্ট ও গ্রাফোথেরাপিস্ট

ছবি ও গ্রাফিক্স: কমলাকান্ত পাকড়াশী

এই সংখ্যায় তোমাদের বলব যে গ্রাফোলজিস্টরা হাতের লেখায় কী কী দেখেন। কিন্তু তারও আগে যে বিষয়টা আলোচনা করা দরকার তা হল কাদের কাদের হাতের লেখা দেখেন গ্রাফোলজিস্টরা। ধরো, যে চার বছরের বাচ্চাটা সবে লিখতে শিখেছে তার হাতের লেখা দেখে কি তার মনের কথা বুঝে যান গ্রাফোলজিস্টরা? না, একেবারেই না। কারণ তখন তাকে যেভাবে লেখা শেখানো হচ্ছে সে কেবলমাত্র সেটাই যান্ত্রিকভাবে অনুকরণ করার চেষ্টা করে। ওই লেখায় তার নিজের কোনও মনোভাব প্রকাশ পায় না। আবার, ধরা যাক, কারোর বাংলা হাতের লেখা খুব সুন্দর। কিন্তু তার ইংরেজি লেখার একেবারে অভ্যেস নেই। সেইক্ষেত্রে তার ইংরেজি লেখা দেখে খুব একটা কিছু বোঝা যাবে না। মানে তখনই আমরা একটা হাতের লেখা দেখে কারোর মনের কথা বুঝব যখন সেই ভাষাতে সেই মানুষটার লেখার অভ্যাস আছে। অন্তত বছর দুই-তিনেক। এছাড়াও যে বিষয়গুলো মাথায় রাখা দরকার তা হল— সবচেয়ে নির্ভুলভাবে একজন মানুষের মনের কথা বোঝা যায়, যার লেখার অভ্যাস আছে, এবং সে মন থেকে কিছু লেখে। অন্য কোনও লেখা টুকে দেয় না। কারণ যখন মানুষকে চিন্তা করে লিখতে হয় তখনই তার neuromascular pathway সবচেয়ে বেশি কাজ করে এবং neurone-এর স্পন্দনগুলো লেখায় নির্ভুলভাবে ফুটে ওঠে। অক্ষরের মধ্যে থেকে উঁকি মারে আমাদের ভাল লাগা, খারাপ লাগা, দুঃখ, আনন্দ, বুদ্ধি, স্বাস্থ্যের ইঙ্গিত এবং আরও অনেক কিছু। এবার একটু আলোচনা করা যাক কয়েকটি বিষয় নিয়ে যেগুলো গ্রাফোলজিস্টরা হাতের লেখায় দেখেন।

১) লেখার অবস্থান কোণ (Slant):

সহজ ভাষায় বলতে গেলে লেখাটা কোন দিকে ঝুঁকে আছে। কারোর কারোর লেখা আবার লাইনের ওপর সোজা দাঁড়িয়ে থাকে। কেউ একটু ডানদিকে ঝুঁকিয়ে লেখে। আবার অদ্ভুতভাবে কারোর লেখা বা দিকে ঝুঁকে যায়।

সোজা দাঁড়ানো লেখা

যাদের লেখা এইভাবে লাইনের ওপর সোজা দাঁড়িয়ে থাকে তারা খুব যুক্তিপূর্ণ হয়। এদের ব্যবহার যুক্তি দিয়ে পরিচালিত— আবেগ দিয়ে নয়। কিন্তু এদের একটা সমস্যা আছে— এরা মনের কথা সব বন্ধুদের কাছে বলতে পারে না। তোমাদের যদি এরকম কোনও বন্ধু থাকে যাকে দেখে হয়তো তোমরা বুঝতে পারছ যে তার মন খারাপ বা রাগ হয়েছে। কিন্তু কী হয়েছে জিজ্ঞেস করলেই সে সব সময়ই বলে— কিছু না। তুমি যদি একদম তার বেস্টফ্রেন্ড না হয়ে থাকো তাহলে তার পক্ষে কিছু বলা খুব মুশকিল হবে।

ডান দিকে ঝুঁকে থাকা লেখা

যাদের লেখা সামান্য ডান দিকে ঝুঁকে যায়– এই ওপরের ছবির মতো তারা যুক্তি আর আবেগ– এই দুইয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে দিব্যি এগোতে পারে। পছন্দের কাজ উচ্ছ্বাসের সাথে করতে পারে।

অতিরিক্ত ডান দিকে ঝুঁকে থাকা লেখা

কিন্তু আবার লেখা যদি খুব বেশি ঝুঁকে যায় তখন লেখার সাথে সাথে আবেগ ও উচ্ছ্বাস– দুইই অতিরিক্ত বাড়তে থাকে। লেখা যদি অতিরিক্ত ঝুঁকে যায় তাহলে কিন্তু যুক্তি, বিবেচনা, আর দায়িত্ববোধ– তিনটেই খুব কমে যেতে পারে।বাঁ-দিকে হেলে যাওয়া লেখা

এবার আসি এইরকম বাঁ-দিকে হেলে যাওয়া লেখার কথায়। এভাবে যারা লেখে তারা খুব চিন্তাশীল মানুষ। এরা আসলে কী কী ভাবছে— এদের কথা শুনে বুঝতে পারা মুশকিল এবং বড় হয়ে এদের মধ্যে খুব সাবলীল প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকে।

লেখার অবস্থান কোণ ছাড়াও আর কী কী দ্যাখে গ্রাফোলজিস্টরা তা ক্রমশ খোলসা হবে আগামী সংখ্যাগুলোতে।

কিন্তু এইখানে তোমাদের একটা কথা বলে রাখা দরকার। গ্রাফোলজিতে সবদিক বিচার বিবেচনা না করে কোনও কিছুকেই ভাল বা খারাপ বলে দেওয়া যায় না। তাই তোমরা যে যেরকম ভাবেই লেখ না কেন, এই প্রবন্ধ পড়ে হুট করে কখনও নিজেদের লেখা পালটানোর চেষ্টা কোরো না কিন্তু। যদি কখনও লেখার কোনও কিছু পালটাতেই হয়, সেক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করা অবশ্যই প্রয়োজন।

পরের সংখ্যায় আমরা ফিরছি লেখার আয়তন বা size এবং আরও অনেক গল্প নিয়ে।