হার আর জিতের মধ্যে ব্যবধান গড়ে তোলে মনের জোর। যে জেতে সে মনের জোরে জেতে আর যে হারে প্রতিপক্ষের অদম্য মনের জোরের কাছে হারে। পৃথিবীতে এমন অসংখ্য নিদর্শন আছে যেখানে কিছু মানুষ শুধুমাত্র মনের জোরে সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন এবং আগামী প্রজন্মের কাছে হয়ে উঠেছেন পথপ্রদর্শক। তেমনই এক নাম— লেখক, সাংবাদিক এবং বক্তা হেলেন অ্যাডামস কেলার, যিনি ছিলেন অন্ধ এবং বধির, কিন্তু জীবনের কাছে তিনি হার মানেন নি। ঐ অবস্থাতে সংগ্রাম করেছেন নিরন্তর, সারাজীবন। তিনি মানবসভ্যতার একটি প্রদীপশিখা যিনি নিজে আলো দেখতে পান নি, অথচ যিনি আলো জ্বালিয়েছেন অজস্র মানুষের মনে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামাতে ২৭শে জুন ১৮৮০ সালে জন্ম হেলেন কেলারের। বাবা আর্থার কেলার এবং মা কেট অ্যাডামস। হেলেনের চার ভাই ছিল। নিজের দু’জন এবং তাঁর বাবার প্রথম পক্ষের বিয়ের আরও দুই। হেলেনের জীবন শুরু হয়েছিল আর পাঁচটা শিশুর মতই স্বাভাবিক এবং সুন্দরভাবে। ছোট থেকেই হেলেন ছিলেন প্রাণবন্ত, চঞ্চল এবং সবার আদরের। ঠিক যখন সব কিছু পৃথিবীর স্বাভাবিক নিয়মে চলছিল তখনই ঘটল এক বিপর্যয়, যাতে ওই ছোট্ট মেয়েটির জীবনে এল এক সংকটপূর্ণ বাঁক। মাত্র ১৯ মাস বয়সে এক জটিল রোগে আক্রান্ত হলেন হেলেন। কী সেই রোগ— সেটা স্পষ্ট করে বোঝা না গেলেও ছোট্ট হেলেন তীব্র জ্বর ও জটিল কোনও পেটের সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছিল বলে জানা যায়। এও জানা যায় যে তাঁর মার হাত থেকে পড়ে গিয়ে হেলেনের মাথায় আঘাত লাগে এবং জ্ঞানও হারায় ছোট্ট মেয়েটি, যার প্রভাব এতটাই ছিল যে দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তির সঙ্গে বাকশক্তিও স্তব্ধ হয়ে যায় মাত্র ১৯ মাস বয়সে।
অন্য যে কোনও বাবা-মার মতো হেলেনের অভিভাবকরাও অত্যন্ত হতবাক এবং চিন্তিত হয়ে পড়েন। তবে এর সাথে তাঁরা কিন্তু তাঁদের সন্তানের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে থাকেন। অসংখ্য ডাক্তারদের সঙ্গে পরামর্শ করেন এবং প্রায় সবাই একই কথা বলেন যে হেলেনের দৃষ্টিশক্তি এবং শ্রবণশক্তি আর ফিরবে না। এতেও তাঁরা দমেননি। মেয়েকে সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবন উপহার দেওয়ার জন্য তাঁরা লড়াই চালু রেখেছিলেন। এই লড়াই করতে করতে তাঁরা এসে পৌঁছলেন আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের কাছে। ইনি সেই আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল যিনি যোগাযোগ প্রযুক্তির অগ্রদূত এবং টেলিফোনের আবিষ্কারকর্তা। মাত্র ৬ বছর বয়েসে হেলেনকে তাঁর অভিভাবকরা নিয়ে গেলেন ওয়াশিংটন শহরে আলেকজান্ডারের কাছে। তিনিও অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেই একই কথা বললেন, হেলেনের পক্ষে পৃথিবীর আলো দেখা এবং সুর শোনা কোনওটাই আর সম্ভব নয়। তাকে এই নিয়েই চলতে হবে বাকি জীবন। কিন্তু আলেকজান্ডার লক্ষ্য করেন যে ছোট্ট এই মেয়েটির মাথায় রয়েছে তীক্ষ্ণ বুদ্ধি। এই তীক্ষ্ণ বুদ্ধই যে হেলেনের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে তা বুঝেছিলেন গ্রাহাম বেল।
এরপর আরও এক নতুন যাত্রা শুরু হয় হেলেনের জীবনে। তাঁর শিক্ষা অর্জনের এক আশ্চর্য যাত্রা। হেলেনের বাবা-মা তাঁদের সন্তানের শিক্ষার জন্য বাড়িতেই সকল আয়োজন করতে থাকলেন। অ্যান সালিভান নামে এক গৃহ শিক্ষিকাকে নিযুক্ত করলেন হেলেনের পড়াশোনার জন্য। যিনি হেলেনকে শিক্ষাদানের জন্য এলেন তাঁর জীবনটাও মসৃণ ছিল না একেবারেই। যদি একটু অ্যানের জীবনের দিকে তাকাই তাহলে জানতে পারব যে তিনিও অনেকটা লড়াইয়ের পথ অতিক্রান্ত করে হেলেনের শিক্ষিকারূপে নিযুক্ত হয়েছিলেন। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে চোখের এক জটিল রোগ ট্রাকোমাতে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারান তিনি; সাথে পড়া এবং লেখার ক্ষমতা দুই-ই হারিয়ে ফেলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেরকিন্স স্কুল ফর দ্য ব্লাইন্ড থেকে স্নাতক হয়ে মাত্র কুড়ি বছর বয়সে হেলেন কেলারের শিক্ষিকা হিসেবে তাঁকে নিয়োগ করা হয়। এই কঠিন চ্যালেঞ্জ অ্যান নেন এবং হেলেনকে একটু একটু করে শিক্ষা দিতে শুরু করেন। প্রথম দিকে হেলেন একেবারেই সহযোগিতা করেননি অ্যানের সাথে, বরং অ্যানকে হেলেনের অনেক রাগ এবং বিরক্তির শিকার হতে হয়েছিল। এমনও কিছু ঘটনা হয়েছে যেখানে রেগেমেগে জিনিস ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন হেলেন। তীব্র জেদ ধরে গুমরে বসে থাকার মতো অনেক ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছে অ্যানকে। তবে অসীম ধৈর্য এবং নিষ্ঠার সঙ্গে ধীরে ধীরে হেলেনকে আঙুল দিয়ে কিছু সাঙ্কেতিক ভাষা শেখাতে থাকেন অ্যান, যেগুলো প্রথম দিকে হেলেন একেবারেই শিখতে চাননি। পরে অবশ্য সেই সব সাঙ্কেতিক ভাষার মধ্যে দিয়ে শিক্ষার আলো পৌঁছে যায় হেলেনের জীবনে। অ্যান যে হেলনের জীবনে শুধুমাত্র একজন শিক্ষিকা ছিলেন তা নয়, পরে এই দু’জন হয়ে উঠেছিলেন পরম বন্ধু এবং সহযোগী। দীর্ঘ ৪৯ বছরের একটা লম্বা সফর ছিল তাঁদের দু’জনের। পরবর্তীকালে অ্যানের জীবনে যখন ব্যক্তিগত সম্পর্কের টালমাটাল অবস্থা চলছে, তখন তিনি সব ছেড়ে দিয়ে হেলেনের সাথে একসঙ্গে থাকতে শুরু করেছিলেন। সাদা চোখেও অনেকে মানুষ চিনতে ভুল করে, অথচ এই দু’জনের জীবনে দৃষ্টির আলো না থাকলেও সম্পর্কের গভীরতা চেনার ক্ষমতা ছিল প্রখর। তাই তাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে আজও। ১৯৩৬ সালে অ্যানের মৃত্যুর পর হেলেন অত্যন্ত ভেঙে এবং মুষড়ে পড়েন তাঁর জীবনের পথপ্রদর্শককে হারিয়ে। তাও তিনি থামেননি এবং এগিয়ে নিয়ে গেছেন তাঁর জীবন-সংগ্রাম। হেলেন কেলারের কথা বলতে গেলেই অ্যান সালিভানের কথা উল্লেখ করতেই হবে, তা না হলে হেলেনের জীবনের একটি বড় অংশ বাদ থেকে যাবে।
হেলেন কেলার; চিত্র সৌজন্য: Wikipedia
হেলেন তাঁর শিক্ষিকা অ্যানের থেকে শিক্ষালাভের সাথে সাথে ১৯০০ সালে র্যাডক্লিফ কলেজে ভর্তি হন। তাঁর সকল পড়াশোনা চলতে থাকে ব্রেইল পদ্ধতিতে। এই সময় থেকেই তিনি লেখার জগতের মধ্যে প্রবেশ করেন এবং নিজের স্বকীয়তা প্রমাণ করতে শুরু করেন। তবে এর আগে ১৮৯১ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে প্রথম বই প্রকাশ হয় ‘দ্য ফ্রস্ট কিং’ আর তারপর থেকেই একের পর এক বই প্রকাশ হতে থাকে। ১৯০৩ সালে হেলেনের বই ‘স্টোরি অফ মাই লাইফ’ যখন প্রকাশ পায় তখন তার বয়স মাত্র ২২। অ্যান এবং তাঁর কর্তার সাহায্যে এই বই লেখার উদ্যোগ নেন হেলেন। তাঁর ২১ বছরের জীবন অবধি ঘটনা এবং সংগ্রামের কথা দক্ষভাবে তুলে ধরেন যা কিনা আজও এক বিশেষ জায়গা করে রেখেছে সাহিত্যের জগতে। এই বই লেখার পর হেলেনের জীবন বিপুলভাবে বদলে যায়। তাঁর জীবন সংগ্রাম এবং লড়াইয়ের কথা সার্থকভাবে তুল ধ’রে উনি সারা পৃথিবীতে সাড়া ফেলে দেন এবং হয়ে ওঠেন এক আলোর দিশারী। নিজের জীবনে আলো না থাকলেও, কীভাবে অন্যের জীবনে আলো পৌঁছে দিতে হয় তারই পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠেন তিনি। গ্রাজুয়েট হওয়ার আগেই এত বড় মাপের সাফল্য উনি পেয়ে যান। ১৯০৪ সালে উনিই প্রথম মহিলা যিনি অন্ধত্ব নিয়ে বি. এ. পাস করেন এবং পরে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন মাত্র ২৪ বছর বয়সে। ভীষণ কঠিন মনে হলেও এ হার না মানা মনের এভারেস্ট জয়। এরপর ১৯০৮ সালে আসে তাঁর পরের বই ‘দ্য ওয়ার্ল্ড আই লিভ ইন’, ১৯১৩ সালে ‘আউট অফ দ্য ডে’ আর ১৯২৭-এ ‘মাই রিলিজিয়ন’।
এই সকল বই লেখা এবং বই প্রকাশের পাশাপাশি উনি নানা জায়গায় বক্তৃতা দিতে শুরু করলেন। তাঁর এই সব বক্তৃতা শুনে দেশে এমনকী বিদেশে অসংখ্য অনুরাগী তৈরি হয়ে যায় তাঁর। তিনি তাঁর কথার মাধ্যমেই প্রতিবন্ধী মানুষের মনে অনুপ্রেরণা যোগাতেন। তিনি বরাবর প্রতিবন্ধী মানুষদের উদ্বুদ্ধ করেছেন আর শিখিয়েছেন লড়াইয়ে স্থির থেকে জীবনে এগিয়ে চলার মন্ত্র। নানা সভায় তিনি যখন বক্তৃতা দিতেন তখন উপচে পড়ত ভিড়। মানুষ মুগ্ধ হয়ে শুনতেন তাঁর জীবন সংগ্রামের কথা, লড়াই করার কথা আর লড়াই ক’রে এক-একটি শৃঙ্গ জয় করার কথা। এই সব কথা শুনে প্রতিবন্ধীদের সাথে সাথে সাধারণ মানুষও অনুপ্রাণিত হতেন।
হেলেন তাঁর কলেজ জীবনে বিশিষ্ট বক্তা মার্ক টোয়েনের সংস্পর্শে আসেন। যে মার্ক টোয়েনের ভাষণ শুনে হেলেন অনুপ্রাণিত হতেন, সেই মানুষটির সাথে একসাথে নানা জায়গায় সভা করেছেন, বক্তব্য রেখেছেন এবং পরবর্তী সময়ে ১৯৫৯ সালে ‘দ্য মিরাকেল ওয়ার্কার’ নামে একটি টি ভি শো করেন, পরে যেটা মঞ্চস্থ হয় এবং এটা নিয়ে সিনেমাও হয়। হেলেন নিজে যেহেতু সাংবাদিকতা করতেন, তাই রাজনৈতিকভাবেও খুবই সজাগ থাকতেন তিনি। রাজনীতি, দর্শন আর সাহিত্য— এই তিনটি বিষয়তেই তাঁর অগাধ জ্ঞান ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর সময়কালে সকল রাষ্ট্রপতিদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল এবং তাঁদের সাথে সমাজ সেবামূলক কাজও করেছেন তিনি। ১৯৪১-এ যখন বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়, তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন রুজভেল্ট। প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের অনুরোধে হেলেন বিভিন্ন হাসপাতালে যুদ্ধে আহত সৈন্য ও নাবিকদের দেখতে যেতেন। তাদের শান্তির ও আশার বাণী শোনাতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে উনি নানা সমাজ সেবামূলক কাজের সাথে যুক্ত হয়ে যান এবং পৃথিবীব্যাপি প্রতিবন্ধী মানুষেদের জন্য কাজ করে যেতে থাকেন। এখানে বলে রাখা দরকার যে ১৯১৫ সালে তিনি ‘ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি সংস্থা তৈরি করেন যা কিনা বাকশক্তিহীন, শ্রবণশক্তিহীন ও দৃষ্টিশক্তিহীন প্রতিদ্বন্দ্বী মানুষের সেবার জন্য কাজ করা শুরু করে।
রবীন্দ্রনাথ ও হেলেন কেলার; চিত্র সৌজন্য: twitter
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হেলেনকে তাঁর কাজের জন্য পছন্দ করতেন। কবির নোবেল জয়ের পর আমেরিকায় একটি সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে হেলেনের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। হেলেনকে কবি শান্তিনিকেতনে আসতে বলেন। কবির জীবদ্দশায় হেলেন আসতে পারেননি ঠিকই, কিন্তু ১৯৫৫ সালে হেলেন ভারতের মাটিতে পা রাখেন। সে বছর দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় হেলেনকে ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেন। শুধু ভারত নয়, পৃথিবীর অসংখ্য দেশে উনি গেছেন এবং বক্তৃতা দিয়েছেন। নানা সভায় বক্তৃতা দিয়ে যে অর্থ উপার্জন হত, সেই অর্থ দিয়ে তিনি প্রায় ৫০টিরও বেশি দেশে অন্ধ মানুষদের কল্যাণার্থে প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলেন। সারা পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য অন্ধ ব্যক্তি শিক্ষা পেয়েছেন এই সকল প্রতিষ্ঠান থেকে।
পরবর্তী জীবনে হেলেন অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১৯৬১ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এই পর পর হৃদরোগে আক্রান্ত হবার জন্য শেষ জীবনে উনি প্রায় ঘরবন্দি হয়ে পড়েন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জনশন ‘প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম’ এই সম্মানে সম্মানিত করেন তাঁকে ১৪ই সেপ্টেম্বর ১৯৬৪ সালে। এরপর ১৯৬৫-তে হেলেন নির্বাচিত হন ‘ন্যাশনাল ওমেন্স হল অফ ফেম’-এ। এই সময়কালে হেলেন বেশী সময় দিতেন ‘আমেরিকান ফাউন্ডেশন অফ ব্লাইন্ড’ এই সংস্থার অর্থ সংগ্রহের জন্য। ১৯৬৮-এর পয়লা জুন নিদ্রার মধ্যেই তাঁর নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হেলেন। হেলেনের আজীবনের সঙ্গী অ্যান সালিভান এবং পলি থমসনের কবরের পাশেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।
হেলেন কেলার একটি সাহসের নাম। হেলেন কেলার অদম্য শক্তির নাম আর পৃথিবী জুড়ে বাকশক্তিহীন, শ্রবণশক্তিহীন ও দৃষ্টিশক্তিহীন প্রতিবন্ধীদের এক অনুপ্রেরণার স্তম্ভ। শেষে দুটো বিষয় উল্লেখ করতেই হয়— এক, হেলেনের বাবা এবং মা-র অনস্বীকার্য অবদান। জীবনের শুরুতে তাঁর অভিভাবকরা যদি তাঁর চিকিৎসার জন্য কোনও রকম চেষ্টা না করে ঘরে ফেলে রাখতেন, তাহলে হেলেনের জীবনের বাকি জয়যাত্রা শুরু তো হতই না, বরং গোটা পৃথিবী তাকে এইভাবে চিনত না। দুই, অ্যান সালিভান। প্রতেকের জীবনে একজন পথপ্রদর্শক থাকে। অ্যান সালিভান শুধুমাত্র একজন পথপ্রদর্শক ছিলেন তা নয়, তিনি ছিলেন হেলেনের জীবনের সবচেয়ে বড় সাহস, সঙ্গী এবং দিশারী। অ্যানের মতো শিক্ষিকা যদি হেলেন না পেতেন তাহলে হয়তো হেলেনের অনেক কিছুই শেখা হত না এবং হেলেনের জীবন থেকে বাকি পৃথিবীর শিক্ষাও অধরাই থেকে যেত। সন্তানের মনের মাটির তালটিকে প্রতিমার রূপ দেওয়ার প্রথম কাজটি করে থাকেন তাঁর অবিভাবকরা। হেলেনের মাতা-পিতার হাল না ছাড়ার মনভাব এবং অ্যানের মতো উপযুক্ত শিক্ষিকাকে নিযুক্ত করা— এই দুটো বিষয় হেলেনের জীবনগঠনে বিপুল সাহায্য করেছিল। তাই তো আজ হেলেন হয়ে উঠতে পারলেন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা শত শত প্রতিবন্ধীদের অনুপ্রেরণার অভিধান।
ঋণ: Wikipedia; The Story of my Life, Helen Keller