Categories
গল্পগ্রাম |

এক টাকার ব্যাঙ

522 |
Share
| ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১
নিবেদিতা ঘোষ রায়

গ্রাফিক্স: কমলাকান্ত পাকড়াশী

পাথরহিরহিরা গ্রাম তিন দিকে জঙ্গলে ঢাকা। বরফ পাহাড়ের চূড়া দেখা যায়। পাহাড়ি রাস্তা এখান থেকে অনেক দূরের পথ। নির্জন ঝিমন্ত গ্রাম। লোকজন সব চাষ বাস করে। সন্ধের পর এসব জায়গায় কিছু করার থাকে না। চা বাগানের নালায় চিতা জল খেতে আসে। সিনেমা, থিয়েটার, জাঁকজমক দোকানপাট সব শহরে। প্রকাণ্ড মাঠ পেরিয়ে বাস রাস্তায় উঠে, প্রায় ছ’ঘন্টা বাসে বসে কোমর ব্যথা করে, বড় শহরে গিয়ে হেঁদিয়ে নামে বাস থেকে গেঁয়ো লোকজন। লোকে তাই কালেভদ্রে শহরে যায়। গ্রামের পাশে বিশাল ছাতুয়ার মাঠ। জায়গা মোটেও ভাল নয়। সেখানে বিহারী ভূতেরা খাটিয়া পেতে বসে ছাতু খায় আর নিজেদের মধ্যে মুণ্ড নিয়ে লোফালুফি করে। বিকেলের আলো নিভে এলে আর কেউ সেদিকে যায় না। দৈবাৎ কোনও অজানা পথিক মাঠের মধ্যে এসে পড়লে দেখে, উনুনে ঘোমটা ঢাকা বউ বসে ভুট্টা পোড়াচ্ছে। কাছে গেলেই সব ভোঁ ভাঁ। হাহা হুহু হাসি আর ইঁট পাটকেল গায়ে এসে পড়তে শুরু করে।

পৌষ মাসে পূর্ণিমার দিন জঙ্গলের ভেতর বনদুর্গার পুজো হয়। মেলা বসে। সারা গ্রামের লোক পিল পিল করে বনের পথে রওনা হয়। জঙ্গলের ভেতর ফাঁকা জায়গায় আগাছা কেটে হরেক রকম দোকান বসে। ব্যাপারিরা আসে দূর দূরান্ত থেকে। শিয়াল, পেঁচা, জন্তু-জানোয়ার, বুনো খরগোস সব গায়েব হয়ে যায়। সারারাত পুজো হয়। সকালে লোকজন সব উধাও। জঙ্গল আবার আগের মতো ঝিম মেরে পড়ে থাকে। লালু আর তার মা ছাতুয়ার মাঠের পাশে পোড়ো জমিতে পাতার ঘরে থাকে।

বনদুর্গার মেলায় লালু কিছু বিক্রি করবে ভাবল। কিন্তু দোকান করার পয়সা তাদের নেই। মেলার দিন সকালে সে বনের পথে চলল গাছের ক’টা গন্ধলেবু নিয়ে। বড় বড় গাছ পথের ওপর ঝুঁকে পড়েছে। মানুষের পায়ে পায়ে ধুলো উড়ছে।

মহা মহা সাধুরা এসেছে। মোটা মোটা গাছের গুঁড়ি জোগাড় করছে তাদের চেলারা। কেউ আখড়ায় করতাল বাজিয়ে হেঁড়ে মিহি গলায় ভজন গাইছে। লম্বা জটা-ঝোপড়া দাড়িতে ভয়ঙ্কর দর্শন সব সাধুরা লাল চোখে বসে ‘বোম বোম’ করছে। এক সাধুর আখড়ায় একজন রোগা চিমসে চেলা জিমন্যাস্টিকস করছে। সেখানে লোকের ভিড় বেশি। এক সাধু সারাদিন এক পায়ে সূর্যের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে; বাবা নাকি জেগে নেই, সন্ধ্যায় পুজো শুরু হলে তার যোগনিদ্রা ভঙ্গ হবে। তার চেলারা খিচুড়ি রাঁধার তোড়জোড় করছে। মুশকো কালো একজন বিশাল শিলে মশলা বাটছে। লালু এদিক ওদিক ঘুরঘুর করে, কোথাও পাত্তা পায় না।

মাইকে হাঁকডাক চলছে। ইলেকট্রিকের মিস্ত্রিরা গাছে গাছে টিউব লাগাচ্ছে। কচুরি-জিলিপির দোকানে ইয়াবড় অ্যালুমনিয়ামের ডেকচিতে ময়দা মাখছে নেচে নেচে এক ছোকরা। লালু শুকনো মুখে লেবু নিয়ে এক কোণে বসেছিল। পাশে শিরীষ গাছের গুঁড়িতে ঠেস দিয়ে এক বাবাজী চোখ বুজে আছে। এনার চেলা, কমণ্ডুল, চিমটে, কল্কে, ধুনির কাঠ কিছুই নেই। অন্যান্য জায়গায় চেলারা প্রচুর খাটছে। তামাক সাজছে।

সাধুরা নারকোল মালার হুঁকোয় কড়াৎ কড়াৎ টান দিচ্ছে। চেলারা মণ-মণ ঘি বেল-কাঠ বয়ে আনছে। সবাই পয়সা রোজগারের নানা ফিকিরে ব্যস্ত। দুটো লোক পা ঊর্ধ্বে তুলে হেট মুণ্ড হয়ে হাত দিয়ে হাঁটছে। প্র‍্যাক্টিস চলছে। সন্ধেবেলা আসল খেলা। টেম্পো, লরি, টোটো, ম্যাটাডোর, রিক্সা, ভ্যানে দূর-দূরান্তের গাঁ থেকে লোক আসছে। গাঁয়ের কিছু সমর্থ ছেলে নদী পার করাচ্ছে। জঙ্গলের গভীরে কিছুদূর গেলে পুত্ত নদী। ঝিরঝিরে জল শীতে। জলের ওপর তক্তা পেতে গাড়ির চাকা পার হচ্ছে। ওপারে গিয়ে আবারও বনের পথ ঢালু হয়ে হয়ে নেমেছে ফাঁকা ঢেউ খেলা মাঠে। যে গাড়ির যেমন চাকা, তেমন টাকা। চাকা পিছু দশ টাকা। সাইকেল কুড়ি, টোটো চল্লিশ, ভ্যান তিরিশ। ভালই ব্যবসা হচ্ছে।

লালু দশ-বারোটা লেবু নিয়ে সকাল থেকে বসে আছে। গরিব লোকেরা লাউ কুমড়ো মাচার বেগুন এনেছে। লালুর পাশে গাছের গুঁড়িতে যে একা সাধু বসে আছে সে লালুকে হাতছানি দিয়ে ডাকল। ভীষণ কালো রং, বোঁচা নাক, একটা চোখ বোজা, কোচকানো কালো ঝাঁকড়া চুল। লালু কাছে যেতে সাধু বলল, ‘পাখি ধরতে তো পারবি না, সময় বেশি নেই। ব্যাঙ ধরতে পারবি?’ লালু অবাক হয়ে বলল— ‘ব্যাঙ কী হবে সাধু বাবা?’ বাবার একটা চোখের দৃষ্টি ভীষণ তীব্র। লালুর দেহ ফুঁড়ে বল্লমের মত ওপারে চলে গেল। সাধু মৃদু হেসে বলল, ‘ভেল্কি’।

লালু বলল, ‘ছাতুয়ার মাঠের ভেতর জলায় অনেক ব্যাঙ আছে’।

‘যা ধরে নিয়ে আয়— একটা ব্যাঙ, এক টাকা’— লালু লেবুগুলো সাধুর কাছে রেখে তাড়াতাড়ি ছুটল। ঝুড়ির মুখে চাপা দিয়ে ব্যাঙ নিয়ে ফিরে এল। সাধুর পাশে রাখা কতগুলো বাঁশের কঞ্চির খাঁচা। সাধু ব্যাঙগুলো খাঁচায় পুরতে লাগলেন। এদিকে এক একটা ব্যাঙ সাপ্লাই দিলে এক টাকা পাওয়া যাচ্ছে। চাউর হতে কতই বা সময় লাগে গাঁ গঞ্জে! বাচ্চা কাচ্চা পাঁচটা দশটা, পনেরোটা যে যেমন পারে ব্যাঙ এনে হাজির করতে লাগল। গাছতলায় কচি ছেলেদের হল্লা ভিড়। খুব তৎপর তারা। ব্যাঙ আনছে খাঁচায় ভরছে। দশ কুড়ি ভালই আয় হচ্ছে। চারপাশে গুজব উঠেছে সাধু সন্ধেবেলা কাঁচা ব্যাঙ খাবেন। কেউ বলছে— না না, ম্যাজিক দেখাবে। ব্যাঙ মেরে বাঁচিয়ে তুলবেন।

অন্যদিন যেখানে অন্ধকার হাহা করে, আজ হ্যাজাক, টর্চ, লন্ঠন নিয়ে কাতার দিয়ে লোক আসছে। যারা হেঁটে নদী পাড় হচ্ছে তাদের পয়সা লাগছে না। নদী ডাইনে বাঁক নিয়ে কুয়াশায় গহীন জঙ্গলে মিলিয়ে গেছে। সেদিকে ছমছমে অন্ধকার। আকাশে বড় গোল চাঁদ। গাছপালার ছায়া ঝুঁকে আছে নদীর ওপর। বাঁদিকে বন গিয়েছে মেলার দিকে। ধুপের ধোঁয়া, সার সার প্রদীপ জ্বলছে। ঢাকিরা মালকোঁচা মেরে ধুতি পরে, মাথায় গামছা বেঁধে বিড়ি টানছে। পুজো শুরু হতে রাত হবে। সাধুদের আখড়ায় মোটা শালগুঁড়ি জ্বলছে। ভীম শীত পড়েছে। একা সাধুর গাছতলায় হঠাৎ করেই ভিড় বেড়েছে। সেখানে বদ্ধ জীবাত্মার মুক্তিদান হচ্ছে। ব্যাপারখানা কেউ কিছুই বুঝছে না। সারি দেওয়া খাঁচা থেকে ব্যাঙ বের করে ছেড়ে দিতে হচ্ছে। ব্যাঙ মুক্তি পেয়ে তিড়িং বিড়িং করে লাফ মেরে পালাচ্ছে। আর তার জন্য পাঁচটি করে টাকা পাওয়া যাচ্ছে। সাধু বলছে, ‘আও জীবাত্মা কো পরমাত্মা মে মিলা দো’। লোকজন কী এক নতুন খেলা দেখে আমোদ পাচ্ছে। তায় আবার পাঁচটা করে টাকা পাওয়া যাচ্ছে। একটা লোক ব্যাঙ ছেড়ে টাকা নিয়ে আবার পেছনে লাইন দিয়েছে। লোকটা কাছে আসতেই সাধু হুঙ্কার দিল। ‘আগে মাৎ বাড়ো। একহিবার!’ সাধুর একটা চোখের জ্বলন্ত দৃষ্টিতে লোকটা ভয়ে গুটিয়ে গেল। দু-একটা বয়স্ক লোক বলতে লাগল, এ কোন ছদ্মবেশি দাতা। মানুষের সেবা করে পুণ্য অর্জন করছে।

মেলার লোকেরা সাধুবাবার গাছে টিউব বেঁধে দিয়ে গেছে। খাঁচা প্রায় ফাঁকা। দু-একটা ব্যাঙ হামাগুড়ি দিয়ে বসে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে। চারদিকে ভুলভাল রটছে। এক তান্ত্রিক বাবা তাঁবুতে ভূত নামাবে, ভূতে নাকি একটা করে গাট্টা মারবে। দু’টাকা করে দিচ্ছে। মেলায় এবার বাবাজিদের জোর কমপিটিশন। লোকজন সেদিকে দৌড়ল। একান্তে নিরালায় বসে সাধু বললেন দ- দ – দ। জরিবুটি মাদুলির আশায় দু’চার জন ঘুরঘুর করছিল। কেউই বুঝল না সাধু তোতলাচ্ছে কেন। নিতাই ফুলুরি ভাজতে ভাজতে উঠে এসেছিল রঙ্গখেলা দেখতে, গম্ভীর ভাবে বলল, ‘বাবা দেয়েলা করছেন, পূর্বজন্মের কথা মনে পড়ছে’।

লালুর লেবু বিক্রি হয় নি। তবে ব্যাঙ ধরে তার পকেটে গনগন করছে পনেরো টাকা। নাবাল পেরিয়ে ওপরে উঠতেই বন। পেট্রোল ডিজেলের গন্ধ। শেয়াল, খটাস, ভাম সড়াৎ করে বনের এপার থেকে ওপারে যায়। জিলিপির গাঢ় রস চাটতে চাটতে লালু বাড়ি ফিরছে। আজ বনে হলুদ জলে গোলা আলো। যত্ন করে ছাঁকনিতে সব অন্ধকার তুলে নিয়েছে পৌষের চাঁদ।

এক রাতের মেলা, দুর্গা পড়ে গেছে করলা নদীতে। মাঠ জুড়ে ধুনির ছাই। বিকেলের দিকে বাবাজিদের দল পায়ে হেঁটে ট্রেকারে কুটকুটে কম্বল গায়ে চলেছে, গাড়ির মাথায় পোঁটলা পুঁটলি নিয়ে তাদের চেলারা।

লালু প্রাইমারি স্কুলে চতুর্থ ক্লাশ পাশ দিয়ে কিছুদিন টিউবওয়েল-মিস্ত্রী পবনের সাকরেদ হয়ে গাঁয়ে গঞ্জে চরকি মেরে বেড়াতে লাগল। গভর্নমেন্টের কাজ। দূর দূরান্তের চাষী বাড়ির উঠোনে, ক্ষেতের আলপথের ধারে, ধূলো-ওড়া হাট বাজারে, পঞ্চায়েতের কোঠাবাড়ির ধারে তার সকাল বিকেল কাটতে লাগল। পবন বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি পেয়ে চলে গেল হঠাৎ। তারপর কিছু দিন আতাপুরের এক উকিল বাড়িতে ফাই ফরমাস খাটার কাজে ঢুকল। চায়ের কাপে কেন হাতল নেই, সেই কারণে রুক্ষ মেজাজের উকিলবাবু তাকে তাড়িয়ে দিলেন। তাঁর গিন্নি যে হাতলবিহীন আধুনিক চা-দানি কিনেছেন, তা কে বোঝে।

লালু গিয়ে ঠেকল ভৈরবপুরে এক বিহারীর খোল ভুসির দোকানে। ততদিনে সে একুশ বছরের মাথায় লম্বা বলশালী যুবক। হাওয়ায়-দোলা নতুন ধান গাছের মতো চুল। বিহারী ভক্ত মানুষ, তার গরু মোষের বিরাট বাথান আছে। বিহারী সকালে তিলক কেটে ঘন্টা বাজিয়ে গদিতে বসেন। বিষয় কর্মের মাঝে তার মুখ হঠাৎ চায়ের কষা লিকারে দুধ পড়ার মতো ফর্সা হয়ে যায়। চমকে উঠে তিনি হিসেব নিকেশ লাকুর ওপর চাপিয়ে, ভক্তি গদ গদ মুখে বসে থাকেন। পাশ থেকে বড় খঞ্জনিটা নিয়ে ঝমাঝম বাজিয়ে ‘বাঁকে বিহারী মেরি ভি শুনলে’ ভজন গাইতে গাইতে বাহ্য সংসার ভুলে যান। তার বাথান থেকে ভইষ, গরু ছুটে যায়। আকারে প্রকারে বৃহৎ বলশালী এক মোষ সোজা পাকা সড়কের ওপর উঠে শহরে হাঁটা মারে। লালু তাকে ধরে আনতে ছোটে।

সারাদিন ছুটিয়ে সন্ধেয় সে পাজি মোষ বশ্যতা স্বীকার করে মাথা নিচু করে বাথানে ফেরে। বিহারী শিউলাল পাঁড়ে লালুকে নিয়ে ভাগলপুরের বটকেশ্বর পর্বতে চললেন তীর্থ করতে মুটের মাথায় দানের কম্বল চাপিয়ে। কৌসেলা থেকে ছ’কিলোমিটার দক্ষিণে বটেশ্বর ধাম, পাহাড়ের ওপর মহাদেবের মন্দির। দু’ধারে বড় বড় অন্ধকার গুহা। রাতে বাঘ এসে শুয়ে থাকে। চড়াই পথে প্রাচীনকালের আমগাছের ছায়ায় বাবার মন্দির। পেছনে জঙ্গল ঢাকা পাহাড়। পাঁড়েজি দান দর্শনে মত্ত। লালু শালপাতায় ক্ষীরের প্যাঁড়া নিয়ে গুহার দিকে চলল।

মা মারা গিয়েছে। এ যাবৎ কটা বছর গ্রামছাড়া হয়ে সে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজ মুদিখানা তো কাল আধাগঞ্জের রেল স্টেশনের ভাতের হোটেল। কতকাল সে তার নিজের গ্রামে যায় নি। ভারী সুন্দর রোদে ভরা শরতের আকাশ। ফুল্ল প্রকৃতি চারিদিকে দিচ্ছে যেন নতুনের হাতছানি। উদ্দাম উৎসাহে তার মন পূর্ণ হয়ে গেল। কী এক অনির্বচনীয় সংযোগ সাধন ঘটল। সে বিশুদ্ধ আনন্দে ছুটতে লাগল। খানিক ছুটে সে নিজেই লজ্জা পেয়ে দাঁড়িয়ে গেল। ডান ধারে গুহা। বাঁয়ে জংলা মাঠ। মাঠের মধ্যে পিপুল গাছের নিচে কে বসে আছে। সে ধামে ফিরবে বলে রাস্তার দিকে চলল। পেছন থেকে কে যেন ডাকল। ঝাঁকড়া কোঁচকানো চুল, খর্ব নাক, এক কৌপিন-পরা সাধু। এক চোখ বোজা। সাধুর খোলা চোখের দৃষ্টি চুম্বকের মতো তাকে দাঁড় করিয়ে রাখল। দুঃস্বপ্নের মতো এক বুনো ফুল ঘাসে-ঢাকা জঙ্গলের ফাঁকা গাছতলা মনে পড়ল তার। হাওয়ায় ভেসে এল আবছা চেহারা, কতদিন না দেখা তার গ্রাম।

সেদিন তার বয়স ছিল সাত। তিন গুণিতক বয়েস এগিয়েছে তার। মেলার মাঠে পরদিন সে সাধুকে খুঁজে পায় নি আর।
সাধু হাসল— ‘আ গ্যয়া’!
ঝোলা থেকে ভাঁজ করা কাগজ বের করে হাতে দিল।
‘ইয়েহি তেরা সাহি সাকিন, চলা যা’।
লালু প্রণাম করল।
সাধু বললেন, ‘দ-দ–দ’। লালুর মনে হল আকাশে যেন মেঘ ডেকে উঠল।
সাধু বললেন, ‘দান্ত, দান, দয়া’।

মাসখানেক পর লালু কাগজের ঠিকানা দেখে কলকাতা গেল। সে পেল সায়েন্স কলেজে ব্যাঙ সাপ্লায়ের কাজ। গোটা ভারতে হাজার খানেক কলেজ।

ছাতুয়ার মাঠের পাশে লালুর ঘর পাকা হয়েছে। ছাতুয়ার মাঠে বিহারী ভূতেরা এখনও যুদ্ধ করে। শূন্য থেকে লাফিয়ে নামে। সাঁ করে শূন্যে উঠে যায়। ঢিল-পাটকেলও মারে। আর সেই জলায় বর্ষায় ব্যাঙের গর্জনে কান পাতা যায় না। লালুর দোকানের নাম নিউ ভেক কার্যালয়।