Categories
রূপকথাহাটি |

কাফ্রি দেশের রূপকথা

392 |
Share
| ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
চন্দ্রনাথ গুপ্ত

উনকামার বাড়ি দক্ষিণ আফ্রিকার ছোট একটি গ্রামে। সে জাতিতে কাফ্রি। কাফ্রি যুবক উনকামা ছিল ভয়ানক সাহসী; বনে-জঙ্গলে; পাহাড়ে-পর্ব্বতে সে শিকার করে বেড়াত। ভয় কাকে বলে, সে ত জানত না। কয়েকদিন ধরে সে ভোরে উঠে দেখতে পেল যে তার সাজানো ফুল-ফলের বাগানের গাছপালা কোনও জন্তু-জানোয়ার এসে যেন একেবারে তছনছ করে গেছে। উনকামার হ’ল ভয়ানক রাগ। সে পণ করল, যে করেই হোক ওই জানোয়ারকে সাজা দিতে হবে। রাত্রি জেগে সে তার বাগান পাহারা দিতে লাগল।

একদিন রাত্রি ভোর হয়-হয়। এমন সময় দেখতে পেল যে একটা অদ্ভুত আকৃতির জানোয়ার বাগানের ফুল-ফল সব নষ্ট করছে। সে অমনি ছুটল তার পিছনে। নদীর পারে গর্তের ভিতর যেমন সেই অদ্ভুত জানোয়ারটা ঢুকল, উনকামাও অমনি সেই গর্তের ভিতর প্রবেশ করল। যেতে যেতে সে এল পাতালপুরীর এক অদ্ভুত দেশে। অদ্ভুত সেই জানোয়ারের আর পাত্তা মিলল না। কোথায় যে সেটা লুকোলো, পাতি পাতি করে খুঁজেও উনকামা তার সন্ধান পেলে না।

সেই পাতালপুরীতে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে উন্কামার সঙ্গে দেখা হ’ল একদল বামনের সঙ্গে। সেই সব বেঁটে বেঁটে জোয়ান জোয়ান বামন বীরেরা ঝুঁকে পড়ল উনকামার উপর। বামনেরা সব হৈ-চৈ চিৎকার করে উনকামাকে লক্ষ্য করে তীর ছুড়তে লাগল। বেচারা দেখল মহাবিপদ! প্রাণ বাঁচাবার জন্যে আবার সে ফিরে এল সেই যে গর্তে, সেই গর্তের পথ দিয়ে তার দেশের বাড়িতে।

উনকামাকে তার গাঁয়ের লোক কেউ চিনতে পারল না। গ্রামের বুড়ো বুড়ো লোকেরা তার নাম শুনে বলল— হ্যাঁ, ছেলেবেলা অমনধারা একটা নাম শুনেছিলুম মনে পড়ে বটে। তা আমরা ত তাকে কখনও দেখিনি; শুনেছি যে নদীর ধারের একটা গর্তের ভিতর দিয়ে সে কোথায় চলে গিয়েছিল। তুমি যে সেই লোক, তা কেমন করে বলব? উনকামা বলল, আমার স্ত্রী কি বেঁচে আছে?

গ্রামের লোকেরা বলল— হাঁ, সে বুড়ি বেঁচে আছে, তার বয়স একশো বছরের কম হবে না।

উনকামার সঙ্গে তার স্ত্রীর দেখা হ’ল। বেচারী হয়ে গিয়েছিল বাস্তবিকই ভয়ানক থুরথুরে বুড়ি। অনেক কথার পর বুড়ী তাকে চিনতে পারল। দু’জনে অনেক সুখ-দুঃখের কথা হ’ল। উনকামার ছোট শিশুটি এখন জোয়ান হয়েছে কিন্তু উনকামার কাছে তাকেও মনে হয় যেন সে বুড়ো হয়ে গিয়েছে। উনকামা সেই যৌবনে যেমনটি ছিল, ঠিক তেমনি আছে।

ঋণ: শিশুভারতী