Categories
ইতিহাসতলা |

যে ইতিহাস ব্রিটিশরা লিখে যায়নি

561 |
Share
| ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
স্বপন সেন

চিত্র: (বাঁদিক থেকে প্রথম ছবি) পোলিশ রেফিউজিদের সঙ্গে রাজা দিগ্বিজয় সিংহ; (দ্বিতীয় ছবি) দিগ্বিজয় সিংহ; সূত্র: wikipedia

সন ১৯৩৯, সেপ্টেম্বর মাস . . . হিটলারের ঝটিকা বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ল পূর্ব ইউরোপের ছোট্ট দেশ পোল্যান্ডের ওপর। সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত পোল বাহিনীর প্রতিরোধ ঝড়ের মুখে কুটোর মতো উড়ে গেল। রাজধানী ওয়ারশসহ পতন হল গোটা পোল্যান্ডের।

কুখ্যাত সব বন্দী শিবিরের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রায় এক হাজার ভীত সন্ত্রস্ত পোলিশ নাগরিক অজ্ঞাত কোন নৌ-বন্দর থেকে অজানা পথে পাড়ি দিল। যাত্রীদের মধ্যে ছিল পাঁচশো মহিলা আর দুশো শিশু। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছিল তাদের এই সমুদ্রযাত্রা। ইউরোপের বহু বন্দর ঘুরেও নামার অনুমতি না পেয়ে শেষমেষ তারা এডেন হয়ে পৌঁছল তেহরান বন্দরে। সেখানেও নামতে না পেরে তারা এসে পৌঁছল বোম্বাই বন্দরে। কিন্তু সেখানকার ব্রিটিশ গভর্নর দু’দিন জাহাজ নোঙর করার পরও নামার অনুমতি দিতে অস্বীকার করেন।

জামনগরের মহারাজ দিগ্বিজয় সিংহ সে-সময় বোম্বাইতে। সব শুনে তিনি জাহাজ পাঠিয়ে দেন নিজের রাজ্যে। রাজধানী থেকে পঁচিশ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রতীরে বালাচাডি নামে এক গ্রামে তাদের থাকার জন্য শিবির নির্মাণ করে দেন। তৎকালীন ইংরেজ শাসকরা এই বিদেশি রিফিউজিদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে যথেষ্ট আপত্তি জানিয়েছিল, কিন্ত মহারাজ কোন কিছুরই পরোয়া করেন নি। শুধু তাদের থাকার জায়গা নয়, কমবয়সীদের জন্য বোম্বাই থেকে ইংরেজ শিক্ষক আনিয়ে তাদের পড়াশোনা শেখারও ব্যবস্থা করে দেন তিনি। দেশীয় রান্না তারা খেতে পারত না বলে গোয়া থেকে আনিয়েছিলেন পর্তুগীজ বাবুর্চি!

নিজেদের দেশ থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে থাকা এই শরণার্থীরা যাতে অসুবিধায় না পড়ে, সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতেন মহারাজ। সদাই বলতেন, ‘Do not consider yourself orphans. You are now Nawnagaris and I am Bapu, father of all the people of Nawanagar, so also yours.’

ছয় বছর পর ১৯৪৬-এ যুদ্ধ থামলে এই পোল্যান্ডবাসীরা দেশে ফিরে যায়, কিন্ত ভুলতে পারে না স্বল্প সময়ের ভারতবাসের স্মৃতি। আজও তারা সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করে জামনগরের মহারাজকে। পরবর্তীকালে সেদিনের সেই শিশুদের একজন সেদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়। জামসাহেবের স্মৃতিতে রাজধানী ওয়ারশ-এর ব্যস্ততম চকের নাম রাখা হয়েছে Good Maharaja Square. সেখানকার সরকারী অনেক প্রকল্প তাঁর নামে চলে। সেদিনের শরণার্থীদের বংশধররা যারা নিজেদের Surviver of Balachadi বলে, তারা এখনও নিয়ম করে এদেশে আসে শুধুমাত্র মহারাজকে শ্রদ্ধার্ঘ জানাতে।

প্রসঙ্গত, মহারাজ রঞ্জিত সিংজিও জামনগরের রাজা ছিলেন এবং ক্রিকেটার অজয় জাদেজা এনাদেরই বংশধর! এটাই এই প্রাচীন দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি . . . বসুধৈব কুটুম্বকম! জামনগরের মহারাজ দেখিয়ে দিয়ে গেছেন The world is a family.