Categories
গল্পগ্রাম |

মুক্তি

378 |
Share
| ৭ মার্চ, ২০২২
চিরঞ্জীব ঘোষ

চিত্র ঋণ: pixino.com; pixbay.com

মন্টাই বড় একরোখা ছেলে। এমনিতে বুদ্ধিমান হলে কী হবে, বড্ড জেদি। নিজে পরখ না করে, কোনও কিছুই বিশ্বাস করে না সে। মন্টাইকে নিয়ে এই এক বড় সমস্যা।

ক’দিন হল মন্টাই কোথা থেকে একটা ময়না পাখি জোগাড় করে এনেছে। মামার ঘাড় ভেঙে একটা নতুন খাঁচাও কিনেছে। দিনরাত পাখিকে খাওয়ানো, নাওয়ানো, কথা বলানো এই চলছে। পড়াশোনা সব লাটে।
ব্রেকফাস্টের টেবিলে বাবা বললেন- ‘মন্টাই, এ কাজটা তুমি একেবারেই ঠিক করোনি। বন্দীজীবন খুব কষ্টের। তুমি ওকে আজই আকাশে উড়িয়ে দাও।’

একগুঁয়ে মন্টাই মাথা নেড়ে বলে— ‘কিছুতেই না।’

আজ রবিবার। মন্টাই সকাল সকাল উঠে পড়েছে। আজ সারাদিন ছুটি। পড়াশোনা নেই, স্কুল নেই, দেদার মজা। কাল মনে মনে অনেক যুক্তি করে রেখেছে ও। আজ সকালে ও ঘুড়ি ওড়াবে, তারপর সাইকেল চালাবে। বিকালে একটা ক্রিকেট ম্যাচ। তারপর সন্ধেয় বন্ধুরা মিলে একটা ফিস্ট। দোতলায় এক কোণে বারান্দা লাগোয়া ঘরটা মন্টাইয়ের। বারান্দায় ঝুলছে ময়নার খাঁচা।

একলাফে বারান্দায় এসে, খাঁচার কাছে মুখ এনে মন্টাই বলল— ‘গুড মর্নিং কালিয়া।’ ময়নাটাকে মন্টাই ‘কালিয়া’ নাম দিয়েছে। এরপর মন্টাই ঘরের দরজা খুলতে যাবে। অবাক হয়ে দেখল দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। চিৎকার করে মাকে ডাকল। কোনও সাড়া নেই। রোববার, তাই বাবাও ঘরে। বাবাকে ডাকল। সাড়া নেই। একঘন্টা কেটে গেল। চিৎকার করে করে মন্টাইয়ের গলা ভেঙে গেল। একসময় তার খুব কান্না পেল।

ঠিক তখনই দরজার বাইরে বাবার গম্ভীর গলা।

‘মন্টাই, আজ থেকে তুমি এই ঘরেই আটকানো থাকবে। খাবার দাবার যা প্রয়োজন সব জানলা দিয়ে দেওয়া হবে।’

ঘরের মেঝেতে মন্টাই পাথরের মতো দাঁড়িয়ে। রাগে নাকের পাটা ফুলতে লাগল। একসময় হাতের কাছে যা পেল ছুঁড়ে ছুঁড়ে ভাঙতে লাগল। তারপর চিৎকার করে কিছুক্ষণ কাঁদল। অবসন্ন দেহে বিছানার ওপর পড়েও রইল কিছুক্ষণ। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলল, ঘুড়ি ওড়ানো, সাইকেল চালানো, ক্রিকেট খেলা কিছুই হল না।

পাখিটা কখনও তীব্র রাগে খাঁচার রডগুলো কামড়ায়। আবার কখনও মনমরা হয়ে ঝিমিয়ে বসে থাকে। মন্টাইয়ের মধ্যে অদ্ভুত পরিবর্তন আসে। নিজের বন্দীজীবন অসহ্য মনে হয়। কালিয়ার খাঁচাবন্দী জীবনের কষ্ট মর্মে মর্মে বোঝে ও।

ওই দূরে মাঠের শেষে সূর্য ডুবছে। মন্টাই বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। খাঁচার দরজা খুলে নিজের হাতে কালিয়াকে উড়িয়ে দেয়। উড়ন্ত কালিয়াকে দেখে মন্টাইয়ের মন খুশিতে ভরে ওঠে।

হঠাৎ পিছনে দরজা খোলার আওয়াজ। বাবা দাঁড়িয়ে। মন্টাই ছুটে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে। বাবা বলেন— ‘সন্ধেবেলা তোমার পিকনিক। নীচে যাও। বন্ধুরা ডাকতে এসেছে। খুব আনন্দ করো, মুক্তির আনন্দ।’