Categories
খেলার মাঠ |

T20 ক্রিকেটের ইতিহাস

371 |
Share
| ২৭ মার্চ, ২০২৩
বিশ্বজিৎ দে

রেডিও উপস্থাপক ও ক্রীড়া-উৎসাহী

ছবি: ইন্টারনেট থেকে গৃহীত

ক্রিকেটের জন্ম ইংল্যান্ডে হলেও তার বিপুল জনপ্রিয়তা কিন্তু এই ভারতে। বিশেষ করে, নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে আমাদের দেশে অন্যান্য সকল খেলাকে ছাপিয়ে ক্রিকেট হয়ে ওঠে মুখ্য খেলা। এমনকী যে হকি অলিম্পিকে একাধিকবার সোনা এনে দিয়েছে, তাকেও ছাপিয়ে ক্রিকেট হয়ে ওঠে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। ক্রিকেটারদের দেখে চুল কাটা থেকে শুরু করে জামাকাপড় পরা কিংবা কোল্ড ড্রিংক খাওয়া সবেতেই চলতে থাকে বিস্তর প্রভাব। কিন্তু এত কিছুর পরেও ভারতে ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল অবধি কোনও ধারনাই ছিল না T20 ক্রিকেট নিয়ে। কিছু আড্ডার ঠেকে, চায়ের দোকানে বা রোয়াকে খানিক আড্ডা হত যে ইংল্যান্ডে নাকি ক্রিকেট খেলা কুড়ি ওভারে শুরু হয়েছে। এমন কিছু ভাসা ভাসা কথা শোনা যেত। ব্যাস এটুকুই।

ব্রিটেনে মূলত কাউন্টি ক্রিকেট সব চেয়ে প্রচলিত। তার ঠিক পরেই টেস্ট ম্যাচ এবং তারও পরে একদিনের ক্রিকেট। সময়ের সাথে পরিবর্তন ঘটেছে প্রজন্মের, তাই তারা আর ওই ধরনের ক্রিকেটে তেমন আকৃষ্ট হচ্ছিল না। দ্রুত ছুটে চলা জীবনের সঙ্গে তাল রাখতে গিয়ে এবং অবসরের নতুন আনন্দ খুঁজতে গিয়ে মাঠে এল T20 ক্রিকেট। লাঞ্চ, টি টাইম আর ড্রিংকস দিয়ে সাজানো ক্রিকেট রানির দেশে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছিল। যত সময় এগোতে থাকল, মাঠ তেমনভাবে ভরছিল না।

সবদিক মাথায় রেখে ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডে Wales Association একটি ঘরোয়া T20 ক্রিকেট টুর্নামেন্ট শুরু করে T20 Cup, যার বর্তমান নাম T20 Blast। নতুন প্রজন্ম সারাদিন কাজ করে এসে পরিবার বন্ধুবান্ধব আর ছোটদের নিয়ে মাঠে ক্রিকেট দেখা, খাওয়া দাওয়া ও আনন্দ করার এক দারুণ সুযোগ পেয়ে গেল। অতএব ইংল্যান্ডে T20 ক্রিকেট শুরুতেই হিট।

ভারতে কিন্তু তখনও T20 ক্রিকেট নিয়ে কোনও আগ্রহ ছিল না। এমনকী ২০০৭-এর প্রথম আন্তর্জাতিক T20 বিশ্বকাপ যা অনুষ্ঠিত হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়, সেখানেও ভারতীয় বোর্ড কোনওরকমে তৈরি করা একটি দল পাঠায় মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে। সেই সময় ভারতীয় বোর্ডেরও তেমন কোনও মাথাব্যথা ছিল না এই ধরনের টুর্নামেন্ট নিয়ে, তাই তারা কিছু নতুন-পুরনো প্লেয়ারদের নিয়ে ওই দল তৈরি করেন। কিন্তু, ভারতীয় বোর্ড চমকে যায় এবং গোটা দেশবাসী আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠে যখন ফাইনালে চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে ভারত ওই টুর্নামেন্ট জিতে দেশে ফেরে। গোটা দেশ তখন বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা। যারা হেঁসেল থেকে পাড়ার রক— চারিদিকে তখন T20 বিশ্বকাপ জয় নিয়ে চর্চা।

ঠিক তখনই ২০০৭ থেকে একটি বিদ্রোহী ক্রিকেট legaue শুরু হয় ভারতের ধর্মশালাতে, যা কিনা ছিল ওই T20 ফরম্যাটের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। যেসব ভারতীয় খেলোয়াড় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বিরুদ্ধে কাজ এবং কথা বলতে শুরু করেন তারাই মূলত এই ICL (Indian Cricket League)-এ অংশগ্রহণ করেন। শুধুমাত্র ভারতীয় খেলোয়াড় বা দল ছিল না এই প্রতিযোগিতায়, এখানে অংশগ্রহণ করেছিলেন বিদেশি বেশ কিছু প্লেয়ার। দেশের একটি বিখ্যাত টিভি চ্যানেলের কর্ণধার ছিলেন এই টুর্নামেন্টের মূল sponsor, তবে এই টুর্নামেন্টের আয়ু বেশিদিন ছিল না। ২০০৭-এ শুরু হয়ে ২০০৯-এর মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। বিদেশি প্লেয়াররা নিজেদের দেশে ফিরতে শুরু করেন, দেশীয় প্লেয়ারদের ওপর বিপুল চাপ আসতে থাকে ওই টুর্নামেন্ট ছেড়ে মূল স্রোতে ফেরত আসার জন্য এবং শেষমেষ BCCI ওই ICL Legaue-কে নিষিদ্ধ করে দেয়। ঠিক তার পরের বছর ২০০৮-এ হৈ হৈ করে শুরু হয় IPL বা Indian Premier League.

প্রথম বছর মোট আটটা দল দিয়ে শুরু হয় এই টুর্নামেন্ট। শচীন তেন্ডুলকর, সৌরভ গাঙ্গুলি, যুবরাজ সিং, রাহুল দ্রাবিড়, মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং বীরেন্দ্র সেহেবাগের মতো কিছু খেলোয়াড়দের আইকনিক প্লেয়ার হিসেবে সামনে রেখে দল সাজানো হয়। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে সকল আটটি দল একে অপরের সাথে খেলে এবং শেষে সেমিফাইনাল ও ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়। টুর্নামেন্ট শুরু হয় ১৮ এপ্রিল আর ফাইনাল ম্যাচ হয় ১ জুন ২০০৭-এ। ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় রাজস্থান রয়্যালস এবং চেন্নাই সুপার কিংসদের মধ্যে। রাজস্থান রয়্যালস ওই ম্যাচ জেতে তিন উইকেটে। তারাই প্রথম IPL চ্যাম্পিয়ন। এখানে বলে রাখা ভাল যে ফাইনাল ম্যাচের ম্যাচ রেফারি ছিলেন ভারতের প্রাক্তন মিডিয়াম পেসার জাভাগল শ্রীনাথ।

এখন দেশ জুড়ে গ্রীষ্মের শুরু থেকে প্রাক বর্ষার সময় অবধি আমাদের সেরা সঙ্গী IPL। গরমের ছুটিতে ছোট থেকে বড়, নারী থেকে পুরুষের বেস্ট পার্টনার এই টুর্নামেন্টে। মাঠের উন্মাদনা, চিয়ার লিডার্স, বাজি, আলো, signature tune আর মেক্সিকান ওয়েভ— সব মিলিয়ে একটা কমপ্লিট প্যাকেজ। প্রতি বছর নতুন নতুন উদ্যমে ফিরে আসুক Indian Premier League, কাজের চাপের মাঝে মনকে তরতাজা করে দিক IPL দেখার উদ্দীপনা!