Categories
মানুষপাহাড় |

রয়্যাল্টি

338 |
Share
| ১ মে, ২০২৩
সৌভিক গুহসরকার

সাহিত্যকর্মী

ছবি: ইন্টারনেট থেকে গৃহীত

আমার পিতামহ সমরেন্দ্রকৃষ্ণ সরকারের কাছে শোনা এ ঘটনাটি। ষাট সালের মাঝামাঝি, দাদু তখন মধ্যশিক্ষা পর্ষদে কাজ করছেন। বিভিন্ন ক্লাসের জন্যে নতুন সিলেবাস তৈরি হচ্ছে। সেই সিলেবাসে সুকুমার রায়ের একটি কবিতা রাখা হয়। সেই ব্যাপারে দাদু ফোন করেন সত্যজিৎ রায়কে। এরপর দাদুর মুখে যা শুনেছিলুম, তাই লিপিবদ্ধ করছি—

‘আমি ফোন করলুম। ওদিক থেকে একজন ভারী গলার ভদ্রলোক ফোন তুললেন। কুশল বিনিময় করলুম। তাঁকে জানালুম যে সুকুমার রায়ের কবিতা আমরা সিলেবাসে রাখছি। এটা শুনে তিনি উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, বাঃ, এ তো খুব ভাল কথা! এরপরেই আমি জিজ্ঞেস করলুম, আপনাকে কীভাবে কত টাকা রয়্যাল্টি দেওয়া হবে, সেটা যদি একটু বলেন। ওদিক থেকে দরাজ গলায় ভেসে এল, র য়্যা-ল্টি? এখানে রয়্যা-ল্টির প্রশ্ন উঠছে কেন? ছেলেমেয়েরা বাবার লেখা পড়বে এটাই তো সব থেকে বড় কথা! এর মধ্যে আবার র-য়্যা-ল্টির কথা আসছে কী করে? না, না, আমার ওসব রয়্যাল্টি-টয়্যাল্টি লাগবে না। ছেলেমেয়েরা পড়বে এতেই আমি খুশি!’

সত্যজিৎ রয়্যাল্টি নিলেন না। নিতেই পারতেন। তিনি চাকরি করতেন না। নির্দিষ্ট আয়ের ব্যবস্থা ছিল না। সেখানে রয়্যাল্টির টাকা এলে মন্দ কী! কিন্তু, তিনি নিলেন না। যেদিন থেকে দাদুর মুখে এই গল্পটা শুনেছি, সেদিন থেকে এই লম্বা লোকটি আমার কাছে একজন বড়মানুষ হয়ে উঠেছেন। পাই-পয়সা নিয়ে মারামারি করার যুগে, এইসব ছোটছোট জোনাকিভরা কাহিনিরা আমাদের শিক্ষক হয়ে ওঠে। নয় কি?