Categories
ভাষাপুকুর |

উলটো পালটা ‘ল’ এর চালটা

683 |
Share
| ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০
সোহিনী ঘোষ

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপিকা, বিদ্যাসাগর কলেজ

গ্রাফিক্স: কমলাকান্ত পাকড়াশী

কত হাওয়া দেয় উলটোপালটা
কত কাজ হয় উলটোপালটা
আরও কত কী যে ওলোট পালোট
উলটালে নাকি শিশির আলতা?

কত কথা কত রকম ভাবে আমরা বলি, তার কোনও ঠিকানা নেই। আমরা কথা বলি অনায়াসেই। অনায়াস মানে? যাতে আয়াস বা কষ্ট নেই। আমরা যখন খুব ছোটো থাকি, তখনই শুরু হয়ে যায় ভাষা শেখা। এই শেখা কিন্তু খুব সহজেই হয়। আমাদের বইও পড়তে হয় না, আর খাতা পেন্সিল নিয়ে দাগও দিতে হয় না। ‘ছোট্ট আমি’-র চারপাশের যত শব্দ আর কথা, সব শুনে শুনেই শিখে যাই। আর এত সহজে শিখি বলে অনেক সময় আমরা বুঝতেই পারি না কত আশ্চর্য মজা ছড়িয়ে আছে আমাদের উচ্চারণে। সেইরকমই একটা মজার কথা আজ তোমাদের বলি।

বাংলা বর্ণমালায় কিছু কিছু অক্ষর আছে যেগুলো আমরা বাঙালিরা সাধারণত উচ্চারণ করি না। যেমন ধর ‘ই’ আর ‘ঈ’, কিংবা ‘উ’ আর ‘ঊ’। আমাদের উচ্চারণ সাধারণত হ্রস্ব বা ছোটোতেই হয়। যেমন—কপির ‘ই’ আর নদীর ‘ঈ’ আমাদের উচ্চারণে একরকম হয়ে যায়। বা ধরো, খাবার কুল আর নদীর কূল-এর ‘উ’ আর ‘ঊ’ আমরা হ্রস্ব বা ছোটো উচ্চারণ করি। দীর্ঘ ‘ঈ’ বা দীর্ঘ ‘ঊ’ আমরা সাধারণত উচ্চারণ করি না। কিন্তু এইগুলো আমাদের বর্ণমালায় আছে।

সেইরকম আরও একটা মজার জিনিসও আছে। বর্ণ একটা, কিন্তু উচ্চারণ দুটো। ভাবছ নাকি অবাক হয়ে, সেটা আবার কী ভাবে হবে? হয়, কিন্তু আমরা খেয়াল রাখি না। এই যেমন ‘ল’। এর কিন্তু দুটো উচ্চারণ। হাসলে নাকি? তাহলে দেখ—

এখানে আছে দুটো শব্দ: আলতা আর উলটা।

কী তফাৎ বলো তো শব্দ দুটোতে? বলতে পারলে না? আচ্ছা, এবার ধীরে ধীরে উচ্চারণ করো তো! এবার বুঝলে? আমরা যখন ‘ল’-এর পর ‘ত’ উচ্চারণ করছি, তখন আমাদের জিভের ডগাটা দাঁতকে ছুঁচ্ছে; আর যখন ‘ল’-এর পর ‘ট’ উচ্চারণ করছি, তখন আমাদের জিভটা উলটে গিয়ে মুখের ভেতরের ছাদকে ধরে ফেলছে। এবার উচ্চারণ কর দেখি—

আ ল তা    আ ল তা    আ ল তা
উ ল টা    উ ল টা      উ ল টা

কেমন মজা !