Categories
রূপকথাহাটি |

পাহাড়ে দৈত্য

867 |
Share
| ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০
সমরেন্দ্রকৃষ্ণ সরকার

১৯১৬-২০১৮। পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষাপর্ষদের কাজ করেছেন দীর্ঘকাল। শিশুসাহিত্যে গভীর উৎসাহ ছিল।

অলংকরণ: পার্থ দাশ

অনেকদিন আগে ইউরোপের উত্তরে নরওয়েতে এক রাজা ও রানি সুখে বাস করতেন। কিন্তু একটা দুঃখ তাঁদের ছিল। তাঁদের কোনও ছেলেমেয়ে ছিল না। একদিন রৌদ্র-ঝলমল সকালে রাজা তাঁর প্রাসাদের বাগানে বেড়াচ্ছেন আর মনে মনে দুঃখ করছেন— এই সুন্দর বাগানে বা তাঁর প্রাসাদে ছুটোছুটি হুটোপাটি করে খেলার মতো কোনও ছেলে বা মেয়ে নেই! ঠিক এমন সময়ে একটা ছোট্টখাট্ট বেঁটে বুড়ো সামনে এসে হাজির হল। বুড়োর প্রকাণ্ড লম্বা ধবধবে সাদা দাড়ি মাটিতে প্রায় ঠেকছিল। সে মাথা নিচু করে রাজাকে সেলাম জানিয়ে বললে, মহারাজ, আপনি দুঃখ করবেন না। আপনার তিনটি অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে হবে। কিন্তু সাবধান! তাদের প্রাসাদের বাইরে এক পা-ও বেরতে দেবেন না, যতদিন না আপনার ছোট মেয়ের বয়স পনেরো বছর পূর্ণ হয়। এর অন্যথা হলে তারা ঝড়ে অন্তর্ধান করবে আর আপনি জীবনের মতো তাদের দেখতেও পাবেন না। আচ্ছা মহারাজ, বিদায়— আমার সাবধানবাণী মনে রাখবেন।

রাজা আনন্দে আত্মহারা হয়ে রানিকে তখনই এই আনন্দ-সংবাদ দিতে ছুটলেন। খবর শুনে আনন্দে রানির চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।

বুড়োর কথা ফলে গেল। রাজা-রানির তিনটি অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে জন্মাল।

নিঝুম প্রাসাদ হই-চই, হাসিতে জেগে উঠল। রাজা কিন্তু বুড়োর সাবধানবাণীর কথা ভোলেন নি। তিনি কোনওদিন রাজকুমারীদের প্রাসাদের বাইরে পা দিতে দেননি। তাদের ওপর নজর রাখার জন্য তিনি প্রাসাদের প্রত্যেক দরজায় রক্ষী নিযুক্ত করেছিলেন।

ছোট রাজকুমারীর বয়স পনেরো বছর পূর্ণ হওয়ার কয়েকদিন আগে, এক গ্রীষ্মের দুপুরে যখন প্রাসাদের সকলেই গরমে ঝিমিয়ে রয়েছে, আর প্রায় প্রত্যেকেই ঘুমিয়ে পড়েছে তখন রাজকুমারীদের মনে রোদ-ঝলমল বাগানে ঘুরে আসার ইচ্ছেটা ক্রমে এত বাড়তে লাগল যে তারা পা টিপে-টিপে নিচে নেমে এল।

বড় রাজকুমারীর নাম ছিল মারিয়া। সে একজন রক্ষীকে বলল, এখন নিশ্চয়ই ঝড় উঠবে না। আমরা কয়েক মিনিটের জন্য বাইরে থেকে ঘুরে আসব। আমাদের একটু বেরতে দেবে না?

রক্ষী খুব ভদ্রভাবে উত্তর দিল, না।

রাজকুমারীরা তখন একজনের পর একজন রক্ষীকে এই অনুরোধ করতে লাগল, কিন্তু কেউ তাদের একটুখানির জন্যও বাইরে যেতে দিতে রাজি হল না। মেজ রাজকুমারী এলিজাবেথ তখন আর একজন রক্ষীকে বলল, আমাদের তুমি একটুখানি যেতে দাও, এই সামনের ঝিলটা পর্যন্ত, আমরা এক্ষুনি ফিরে আসব। এমন বিকালে বাগানটা কী সুন্দর দেখাচ্ছে বলো তো!

রক্ষী বুঝল তাদের মনের ব্যথা, কিন্তু তাদের বাইরে যেতে দিতে সাহস করল না।

মনের দুঃখে রাজকুমারীরা পরের দরজার রক্ষীর কাছে গেল। ঠিক সেইসময় দরজা ঠেলে তাদের জন্য ফুল নিয়ে ঢুকল মালি৷ খোলা দরজা দিয়ে তারা দেখল, আহা কী চমৎকার বাগান! কত গাছ, কত ফুল, কত মৌমাছি, প্রজাপতি, খরগোশ, কাঠবেড়ালি, হরিণ— সবাই যেন তাদের ডাকছে।

ছোট রাজকুমারী গের্ডা আর থাকতে পারল না। রক্ষীকে বললে, একটুখানি যেতে দাও আমাদের, দু’মিনিটের জন্য, শুধু দু’মিনিট৷

রক্ষী রাজি হল না। বেচারী রাজকুমারী ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। তখন রক্ষীর দয়া হল। সে বলল, তোমরা কথা দাও, আমার চোখের আড়াল হবে না, দূরে যাবে না, এক্ষুনি ফিরে আসবে!

রাজকুমারীরা রাজি হল। রক্ষী তাদের ছেড়ে দিল।

বাগানে বেরিয়ে তাদের সে কী আনন্দ! পায়ের তলায় নরম ঘাস, মাথার ওপর নীল আকাশ! তারা হাসতে-হাসতে, নাচতে-নাচতে আনন্দে হই-চই করতে-করতে, ঘুরে ফিরে ফুল তুলতে লাগল আর মাঝে-মাঝে সেই রক্ষীকে হাত নাড়তে লাগল। যখন ফুলে-ফুলে হাত ভরে গেল, মারিয়া বলল, চল, এবার যাই। ঠিক সেই সময়ে গের্ডার নজরে পড়ল সবুজ লনের ওধারে ছোট্ট একটি গাছে একটি চমৎকার লাল ফুল ফুটে রয়েছে। সে সেদিকে আঙুল দেখিয়ে বললে, দ্যাখো দ্যাখো এলিজাবেথ আর মারিয়া একসঙ্গে বলে উঠল, ও মা কী সুন্দর! ওটা আমরা নেব।

ছুটল তিনজনে। সেই মুহূর্তে কোথা থেকে কালো মেঘ এসে আকাশ ছেয়ে ফেলল। চারিদিক হয়ে গেল রাত্রির মতো অন্ধকার৷

আকাশে গর্জন করে উঠল বজ্র, সারা পৃথিবী উঠল কেঁপে। তার একটু পরেই আবার আকাশ হয়ে গেল পরিষ্কার, ঝড় চলে গেল, বাগান ঝলমল করে উঠল সূর্যের সোনার আলোয়।

কিন্তু রাজকুমারীরা কই? তাদের চিহ্ন নেই কোনও৷ খোঁজ খোঁজ রব পড়ে গেল চারিদিকে। মারিয়া, এলিজাবেথ, গের্ডা— কোথায় তোমরা? কোথায়? প্রাসাদে, বাগানে রাজকুমারীদের কোনও খোঁজ মিলল না।

মেয়েদের দুঃখে রাজা-রানি শয্যা নিলেন। রাজা ঘোষণা করলেন, যে রাজকুমারীদের ফিরিয়ে আনতে পারবে তিনি তার সঙ্গে তাঁর মেয়ের বিয়ে দেবেন। আর দেবেন অর্ধেক রাজত্ব।

চারিদিকে বেরিয়ে পড়ল কত লোক। কত দিন, কত মাস কেটে গেল। রাজকুমারীদের খোঁজ আর মিলল না।

রাজপ্রাসাদের কাছেই থাকত একটা ছেলে। নাম তার ওলাভ্। সে কোনও কাজকর্ম করত না। গরমকালে নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে শুয়ে থাকত। আর শীতের রাত্রে আগুনের ধারে হাত-পা গুটিয়ে বই পড়ত। রাজকুমারীদের গল্প শুনতে শুনতে একদিন সে মাকে বললে, মা, তুমি আমাকে কিছু খাবার তৈরি করে দাও, আমি রাজকুমারীদের খুঁজে নিয়ে আসি।

তারপর সত্যিই একদিন সে লাঠির ডগায় মায়ের তৈরি খাবারের পোঁটলা বেঁধে, কাঁধে ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়ল। কত পাহাড়, কত উপত্যকা, কত জঙ্গল, কত ঝরনা, কত নদী সে পেরিয়ে গেল!

দিন গেল, সপ্তাহ গেল। পথে মাঝে-মাঝে থেমে, সে এখান থেকে ওখান থেকে কিছু দুধ আর কিছু খাবার জোগাড় করে নিত। শেষে একদিন ওলাভ্ এসে পৌঁছল এক পুরনো গোলাবাড়িতে। সে দরজা ধাক্কা দিল। কারওর সাড়া নেই। শেষে হুড়কো খুলে সে ভিতরে ঢুকে পড়ল। কেউ কোথাও নেই।

তারপর কার যেন পায়ের শব্দ শোনা গেল।

‘গুড ইভনিং, ওলাভ্’ বলে একটি ছোটখাটো বুড়ো লোক ভিতরে ঢুকল। তার লম্বা দাড়ি প্রায় মাটি ছোঁয়া। ওলাভ্ অবাক।

লোকটি পকেট থেকে ছোট একটা পাইপ বার করে তাতে তামাক ভরে শূন্যে আঙুল নাড়ল ডানদিকে বাঁদিকে, আর অমনি আগুনের শিখা দেখা গেল। তাতে সে পাইপটা ধরিয়ে নিয়ে দিব্যি টানতে লাগল। একটু বাদে সে বলল, ওহে ছোকরা, একটা রূপোর শিলিং দাও না, কিছু খাবার কিনে আনি। ওলাভ্ বুঝল লোকটি সাধারণ মানুষ নয়। সে বলল, টাকা তো আমার নেই, তবে কিছু কাঠ পেলে রাঁধবার চেষ্টা করতুম৷ বুড়ো বলল, আমি তো কাঠ কাটতে জানি না।

ওলাভ্ বলল, আমি দেখিয়ে দেব। সে কাছেই একটা কাঠের গুদামে গিয়ে একটা কুড়ুল নিয়ে একটি আস্ত কাঠ চিরে ফেলে বুড়োকে ডেকে বলল, দ্যাখো তো কাঠটা ঠিকমতো চেরা হয়েছে কি না! বুড়ো নিচু হয়ে কাঠখানা দেখতে গেল। ওলাভ্ যেই দেখল যে বুড়োর লম্বা দাড়ি চেরা কাঠের ফাঁকে ঢুকে পড়েছে, অমনি সে কুড়ুলটা টেনে নিল। ব্যস, বুড়ো জব্দ! দাড়ি আর কিছুতে ছাড়াতে পারে না। শেষে ওলাভ্ বলল, যদি তুমি বলে দাও রাজকুমারীরা কোথায় আছে, তবে তোমায় ছেড়ে দেব।

উপায় কী! বুড়োকে বলতেই হল! সে বললে, তিনদিন তিনরাত সোজা হেঁটে একটা উঁচু পাহাড়ে পৌঁছাবে। সেখানে একটা গোল পাথর দেখবে। সেটা সরালে দেখবে একটা অন্ধকার গভীর গর্ত। সেখান দিয়ে নিচে নেমে পাবে আগুন আর জল। ভয় পাবে না। তোমার কোনও ক্ষতি হবে না।

বুড়োকে ছেড়ে দিয়ে ওলাভ্ চলল। তিনদিন তিন রাত পরে সে এসে পৌঁছাল পাহাড়ের শিখরে। তারপর বুড়োর কথামতো কাজ করে সে পৌঁছাল গুহার তলায়। অন্ধকারে চোখ সয়ে গেলে সে দেখল যে সেখানে স্তূপাকার করে রাখা আছে সোনা আর রূপা। পাশেই একটা দরজা। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে ওলাভ্ দ্যাখে ছোট রাজকুমারী গের্ডা ঘরের মধ্যে বসে কাঁদছে।

ওলাভ্ বলল, আমার নাম ওলাভ্, আমি তোমাকে আর তোমার বোনেদের উদ্ধার করবার জন্য এসেছি। গের্ডা বলল, আমি দেখছি তোমার খুব সাহস! আমিও তোমাকে সাহায্য করব। দেওয়ালে ওই যে বড় তরোয়ালটা ঝুলছে, দ্যাখো তো ওটা তোমার মাথার ওপরে ঘোরাতে পারো কি না। ওলাভ্ অনেক চেষ্টা করেও তরোয়ালটা একটুও নড়াতে পারল না। গের্ডা বলল, এক কাজ করো― তরোয়ালের পাশে যে শিঙাটা রয়েছে সেটাতে ফুঁ দাও। দেখবে তাতে জোর পাবে। ওলাভ্ তাই করল। তার গায়ে জোর এসে গেল। তারপর সহজেই তরোয়াল ঘোরাতে পারল।

একটু পরেই ভীষণ একটা শব্দ হল, যেন তিনটা ঝড়ের শব্দ মিলে একটা হয়েছে। গের্ডা বলল, ওলাভ্, পাশের দরজার পিছনে লুকিয়ে পড়ো। তখনই দরজা কাঁপিয়ে ঘরে ঢুকল এক বিরাট দৈত্য। তার তিনটে কুৎসিত মাথা। আর সে এত লম্বা যে তার মাথাগুলো দেওয়ালে ঠেকছে। দৈত্য গর্জন করে উঠল, বাইরের লোকের গন্ধ পাচ্ছি মনে হচ্ছে! ঠিক সেই মুহূর্তে ওলাভ্ একটা টেবিলের ওপর লাফিয়ে পড়ল। দৈত্য নিচু হয়ে তাকে ধরতে যাবে, এমন সময়ে ওলাভ্ সেই বড় তরোয়াল দিয়ে জোরে এক কোপ বসিয়ে দৈত্যের তিনটে মাথা একসঙ্গে কেটে ফেলল।

গের্ডা তো মহাখুশি! ওলাভ্ গের্ডাকে জিজ্ঞাসা করল, তোমার অন্য বোনেরা কোথায়? গের্ডা বলল, তুমি যদি পুবদিকে তিন দিন তিন রাত্রি হাঁটো তা হলে তুমি একটা বাড়িতে পৌঁছাবে। সেখানেই আমার মেজ বোন এলিজাবেথ বন্দিনী হয়ে আছে। ওলাভ্, আমাকে তোমার সঙ্গে নিয়ে যাবে? ওলাভ্ বলল, না, রাজকুমারী। তুমি এখানে থাকো। আমি তোমার বোনেদের নিয়ে আসছি।
ওলাভ্ বেরিয়ে পড়ল।

গের্ডার কথামতো হেঁটে সে পৌঁছে গেল এলিজাবেথ যেখানে বন্দিনী রয়েছে সেইখানে।

সে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল। দরজাটা খুব ভারী আর ঘরটা খুব বড়। ঘরের মাঝখানে বসে কাঁদছে এলিজাবেথ। এখানে ঠিক আগের মতো ঘটনা ঘটল। দরজার পাশে আরও বড় একটা তরোয়াল ঝুলছিল। আর পাশে ছিল একটা শিঙা৷ শিঙাতে বেশি করে ফুঁ দিল ওলাভ্। তারপর তরোয়ালটা ঘুরিয়ে একবার দেখে নিল। একটু পরেই ভীষণ গর্জন করে দৈত্য এল, যেন বড় বড় পাহাড়ে ঠোকাঠুকি চলছে। এ দৈত্যটার ছটা মাথা। আর সে এত লম্বা যে বুঝি ছাদ ফুঁড়ে বেরিয়ে যাবে মাথাগুলো, তাই মাথা নিচু করতে হয়েছে। ওলাভ্ একটা চেয়ারের উপর লাফিয়ে উঠে ঘরের ম্যান্টেলপিসের ওপরে উঠে এক নিমেষে এক কোপে কেটে ফেলল দৈত্যের ছ’টা মাথা।

এবার বাকি রইল মারিয়ার উদ্ধার। এলিজাবেথকে রেখে ওলাভ্ বেরল মারিয়ার খোঁজে।

এলিজাবেথের কথামতো পুবদিকে তিন দিন তিন রাত্রি হেঁটে পৌঁছল মারিয়া যেখানে আটক আছে সেই বাড়িতে।

এবারেও ওলাভ্ শিঙাতে ফুঁ দিয়ে তরোয়াল নিয়ে তৈরি হয়ে রইল। তবে এই তরোয়ালটা ছিল আরও বড় আর ভারী, তাই ওলাভকে শিঙাতে দিতে হয়েছিল মস্ত ফুঁ। আর দৈত্যটাও ছিল বিরাট। তার মাথা ন’টা, নাকও ন’টা, ন’টা কদাকার মুখ আর ভীষণ একটা চোখ। সে যখন লম্বা লম্বা পা ফেলে আসছিল মনে হচ্ছিল সমস্ত পৃথিবীটাই বুঝি ভেঙে গুড়িয়ে যাবে। সে ঘরে ঢুকতে ঘরটা থরথর করে কেঁপে উঠল, মনে হল বুঝি ভেঙে পড়বে।

মারিয়া ওলাভকে দরজার আড়ালে লুকিয়ে রেখে বললে, চুপ করে এখানে দাঁড়িয়ে থাকো। আমি দৈত্যটাকে ঘুম পাড়াব, তারপর তুমি ওর মাথাগুলো কাটবে। দৈত্য গর্জন করে উঠল, ওহো, আমি বাইরের মানুষের গন্ধ পাচ্ছি।

মারিয়া বলল, হ্যাঁ বিকেলে একটা ছেলে এসেছিল। আমি তাকে ধরে আপনার জন্য রান্না করছি। আপনি ক্লান্ত রয়েছেন, একটু বিশ্রাম করে নিন, ততক্ষণে আমি সব তৈরি করে নিই।

দৈত্য শুয়ে পড়ল। তার ন’টা নাকই গর্জন করতে লাগল। ওলাভ্ পা টিপে-টিপে এসে তার মাথার কাছে দাঁড়াল। তারপর যথাশক্তিতে তরোয়াল ঘুরিয়ে তার মাথাগুলোর ওপর চালাল৷ আটটা মাথা এক কোপে কেটে গেল কিন্তু একটা ভীষণাকার মাথা রয়ে গেল। দৈত্য সেই মাথাটা নিয়ে উঠে ওলাভকে ধরে মুখে পুরে ফেলতে চাইল। বিদ্যুতের মতো চকিতে ওলাভ্ তরোয়ালের এক কোপে সেই মাথাটাও কেটে ফেলল।

সময় নষ্ট না করে মারিয়ার হাত ধরে ওলাভ্ ছুটল। এসে পৌঁছল এলিজাবেথের কাছে। তারপর এলিজাবেথকে নিয়ে ছুটল গের্ডার কাছে। মুক্ত হয়ে তিন বোনের সে কী আনন্দ! যে পথ দিয়ে ওলাভ্ এসেছিল, সেই পথ দিয়ে রাজকুমারীদের নিয়ে ফিরল সে।

তারা যখন রাজপ্রাসাদে পৌঁছল, তখন রাজা-রানি আনন্দে অশ্রুপাত করতে লাগলেন। তিন সপ্তাহ ধরে সারা রাজ্যে নাচ-গান, খাওয়া-দাওয়া চলল। তারপর রাজা ওলাভের সঙ্গে গের্ডার বিয়ে দিলেন। আর ওলাভকে অর্ধেক রাজত্ব দিলেন।

ওরা সুখে বাস করতে লাগল। ওলাভের সাহসের কথা লোকের মুখে-মুখে ফিরতে লাগল। আজও সারা নরওয়েতে তার বীরত্ব আর সাহসের গল্প শুনতে পাওয়া যায়।

ঋণ: রূপকথার ঝাঁপি, সমরেন্দ্রকৃষ্ণ সরকার